বৃহস্পতিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০০৭

অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ

বাবা পুলিশে চাকরি করাতে পুলিশের প্রতি এক ধরনের আকর্ষন সব সময়ই ছিলো, এখনো আছে। দেশের পুলিশকে খুব কাছ থেকে দেখাতে ভালো-মন্দ মিশিয়ে অন্ন এক ধরনের অনুভূতি কাজ করে নিজের মাঝে। কখনোই ইচ্ছে হয়নি বাংলাদেশ পুলিশ কাজ করতে, বাবাও সেটা চান নি কখনো। তবে ইচ্ছে আছে অস্ট্রেলিয়ায় যদি থাকি তবে পুলিশে যোগদান করতে। এখানকার পুলিশকে দেখলে এদের সাথে কাজ করতে ইচ্ছে হয় খুব।
বাসার খুব কাছেই অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ কলেজ। হোটেলে প্রায় সব সময়ই কোনো না কোনো পুলিশ অফিসারকে দেখি। সারা অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা পুলিশ। কেউ বা স্টেট পুলিশ , কেউবা ফেডারেল পুলিশ। মাঝে মাঝে অন্য দেশ থেকে আসা পুলিশও আমাদের এখানে উঠে থাকে। আমিও বেশ আগ্রহ ভরে তাদের সাথে পরিচিত হই ও আলাপ করি। একজন পুলিশের সন্তান হিসেবে তাদের কাছে বেশ সমাদরও পাই। খুব কাছ থেকে তাদের দেখা , মেশা ও বোঝার চেষ্টা করি।
অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করি বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের মাঝে। সব চেয়ে বড় যেটা লক্ষ্য করি সেটা হোলো যোগ্যতা। এখানকার পুলিশ বিশেষ করে ফেডারেল পুলিশের নুন্যতম যোগ্যতা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট। ওয়ান টায়ার রিক্রুটনমেন্ট বলে কারো মাঝে আলগা বড়মানুষি নেই যা আমাদের পুলিশে ন গ্নভাবে বিদ্যমান। আজ যে কমিশনার সেও কন্সটেবল হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করেছিলো। এখানে সবাই কন্সটেবল হিসেবে যোগ দেয়, যোগ্যতা ও আগ্রহ থাকলে আস্তে আস্তে তারা উপরে উঠে যায়। বিভিন্নবিষয়ে তারা স্পেসালাইজেশন নেয় এবং সেটাতেই তারা কাজ করে। বাংলাদেশের মতো 3 স্তর বিশিষ্ট রিক্রুটমেন্ট না থাকাতে ফালতু ও বাজে শ্রেনী বৈষম্য এখানে দেখা যায় না। বয়স কোনো বাধা নয় এখানে। নুন্যতাম শারিরীক যোগ্যতা , শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে যে কেউ পুলিশ যোগ দিতে পারে। যে কারনে নতুন রিক্রুটে 20 বয়সী তরুন যেমন দেখা যায় তেমনি দেখা যায় 40 বছরের প্রায়-পৌড়কে।আমি একজন কন্সটেবলকে দেখেছিলাম আর্মির মেজরের চাকরি ছেড়ে পুলিশে যোগ দিতে।তবে বেতন খুব বেশী না হলেও এখানে পুলিশকে এমন এক বেতন দেয়া হয় যাতে তাকে অন্য চিন্তা না করতে হয়। চাকরির উন্নতি ও বয়স বাড়ার সাথে সাথে বেতনও বাড়ে। আচার ব্যবহারে অনেকটুকুই ক্যাজুয়াল ও ভদ্্রএরা।
সাধারন নাগরিকের সাথে কথা বলার সময় 'স্যার' বলে সম্ভাষন করে সম্মান হিসেবে। পুরোপুরি উলটা আমাদের দেশ থেকে। বাংলাদেশে স্যার না বল্লে পারলে হাজতে ঢুকিয়ে দেয় পুলিশ।নিজেদের মাঝে কাজ করার সময়ও এরা অনেকটুজুই ক্যাজুয়াল। সিনিয়র আফিসারকে সম্মান দেখালেও ফালতু তৈলামী নাই এখানে।
ডিউটি অফ থাকলে বন্ধুর মতো আচরন। ক্যানবেরার ড্রাগ স্কোয়াডের পার্টিতে গিয়েছিলাম একবার । সেখানে কন্সটেবল থেকে শুরু করে পুলিশ কমিশনার পর্যন্ত অফিসার ছিলেন। খুবি ক্যাজুয়াল ভাবে সবাইকে মিশতে দেখেছি সবাইকে। বোঝাই যায় নি কে কমিশনার আর কে কন্সটেবল। বাংলাদেশ পুলিশের ইফতার পার্টিতে গিয়েছিলাম একবার। আই.জি কে দেখে মনে হয়েছিলো যেনো সে দেশের রাজা ! সামন্তসুলভ আচরন ও সম্মান সে পেয়েছিলো।
বাংলাদেশ পুলিশে ইউনিয়ন করার কোনো সুযোগ নাই। তবে এখানে পুলিশ ইউনিয়ন আছে। তারা প্রতিবাদ মিছিলও করে, আবার পুলিশই সেই প্রতিবাদ মিছিল পাহাড়া দেয়।
আমি আমাদের দেশের পুলিশে সাথে তুলনা করতে চাই না। প্রচন্ড সীমাবদ্ধতার মাঝে কাজ করতে হয় বাংলাদেশ পুলিশকে। সাথে যুক্ত হয়েছে নোংরা , অ শ্লীল দূনর্ীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। এ ছাড়া রয়েছে রাজনৈতিক নিয়োগ, শতাব্দি প্রাচিন ট্রেনিং, মন-মানসীকতা ইত্যাদি ইত্যাদি। বলে শেষ করা যাবে না ।
এখানে এতো সুযোগ সুবিধার মাঝেও পুলিশ দূনর্ীতি করে , তবে বাংলাদেশের মতো রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে টাকা নেবার মতো না। তবে ধরাও পরে ও বিচারও হয়। মূলত ড্রাগ স্কোয়াডের মাঝেই দূনর্ীতি বেশী দেখা যায়।
মাঝে মাঝে অযাচিত আচরন ও ব্যবহারের জন্য এদের সমালোচীতও হতে দেখা যায়। আমার মনে হয় ক্ষমতা মানুষকে পরিবর্তন করে দেয় সব দেশেই। কোথায় বা সেটা বেশী, কোথায় বা সেটা কম।
ক্যানবেরায় বেশ ক মাস আগে পুলিশের একজন সিনিয়র সুপারেনডেন্ট ড্রাংক অবস্থায় ধরা পরে। লিমিট থেকে সামান্য উপরে ছিলো সে। তাকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয় এবং চাকরি থাকে বরখাস্ত করা হয়।এতো কিছুর পরও এখানে পুলিশকে পোলা পাইন " পিগ" বলে গালী দেয়। সাধারন মানুষ পুলিশকে বন্ধু বল্লেও অপছন্দও করে।
********
একটা মজার গল্প বলে পোস্ট শেষ করি,ড্রাগ স্কোয়াডের পার্টির কথা আগেই বলেছি। সেখানে একজনের সাথে বেশ অনেক ক্ষন কথা হয়েছিলো। বাংলাদেশ পুলিশের সাথে সে কাজও করেছিলো পূর্ব তিমুরে। যাই হোক, এক দিন রাস্তায় হেঁটে আসছিলাম। হঠাৎ শুনি , আমার নাম ধরে কে জানি ডাকছে। পেছন ফীরে দেখি এক পুলিশ। আমি বেশ ভয়ই পেয়েছিলাম । ভেবেছিলাম কি দোষ করলাম যে আমাকে ডাকছে পুলিশ। পরে দেখি সেই পুলিশ। আমি তার নাম ভুলে গেলেও সে আমাকে ভুলে নাই।--------
বিঃ দ্্র ঃ
পুলিশ পছন্দ করেলেও ভয় পাই।
বাংলাদেশের পুলিশ হতে 303 হাত দূরে থাকি।
অজানা কারনে এখানকার মেয়ে পুলিশরা খুব সুন্দরি হয় ( পুলিশে যোগ দেবার ইচ্ছা হবার এটাও একটা কারন )।
এটা কোনো গবেষনা পত্র বা সাহিত্য না।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।