রবিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১২

জীবনটা ম্যারাথন দৌড়ের মতো


উপলব্ধি ১
কাজের ফাঁকে ইউটিউবে লন্ডন অলিম্পকের ম্যারাথনের হাইলাইট দেখছি। হঠাৎ মনে হলো, আরে জীবনের সাথেতো ম্যারাথন দৌড়ের অনেক মিল আছে ! দৌড় শুরু হতেই দেখা গেলো  অনেকেই এমনভাবে দৌড় শুরু করছে যেনো যে এক দৌড়েই ফিনিশিং লাইনে পৌঁছে যাবে। আবার কেউ কেউ দম ধরে রেখে ধীর স্থির ভাবে দৌড়ুচ্ছে যেনো শেষে পৌছুনোর কোনো তাড়নাই তাদের মাঝে নেই। দৌড়ের মাঝ পর্যায়ে এসে দেখা যাচ্ছে যারা প্রথমে যারা জোড় কদমে শুরু করেছিলো তারা আস্তে আস্তে পিছিয়ে পড়ছে আর দম রেখে দৌড়ুনোরা আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের পেছনে রেখে।  এক সময় সবাইকে পেছনে রেখে উগান্ডার স্টেফান কিপরোটিচ লন্ডন অলিম্পিকের শিরোপা জিতে নিলো।

জীবনের সাথে মিল খোঁজ পাওয়ার ম্যারাথন দৌড়ের অনেক টুকুই মিল পাচ্ছি। এই দৌড়ে কেউ বা প্রথম হবার জন্য হন্যে হয়ে দৌড় শুরু করলো, আরেক দল পিছিয়ে পড়তেই থাকলো, আরেকদল দম রেখে ধীরে সুস্থ্যে দৌড়ুচ্ছে। প্রথম দল দম হাড়িয়ে এক সময় শেষ সীমানায়  কোনো মতে পৌঁছুতে পারলেও বা আদৌ না পারলেও শেষদল যারা দল রেখে বুঝে শুনে দৌড়িয়েছে জয় তাদেরই হয়।  প্রত্যেকটা মানুষেরই সীমাবদ্ধতা আছে। সেটা মাথায় রেখে কাজ চালিয়ে গেলে জয় তাদের আসবেই, দরকার অসীম ধৈর্য ও দম ধরে রাখা। 

উপলব্ধি ২
বিলাত প্রবাসী বন্ধুর সাথে বেশ কদিন আগে ফেসবুক টুকটাক কথা বলছি। কথায় কথায় ও বলে  'তোরাই ভালো আছিস'। ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়া শেষ করে ব্রিটিশ টেলিকমে কাজ করা বন্ধুর কথায় তেমন একটা অবাক হইনি অবশ্য, এমনি অনেকের কাছ থেকেই সব সময়ই শুনি। আমি বলি ' ক‌্যামনে?'। তারপর শুরু হলো ওর সেই চিরায়ত হা হুতাশ। ও ওটা করেছে , সেটা ওটা কিনেছে ইত্যাদি ইত্যাদি।


সব শুনে আমি বল্লাম ' দোস্ত, এইটা তোর নদীর এপাড়ে ছাড়িয়া  নিশ্বাষ ওপারে সর্ব সুখ সিন্ড্রোম, এইটা কাটাইতে না পারলেতো তুই সুখি হইতে পারবি না।' আমার কথায় মনে হয় ও খুশি হলো না। আমি আবার বল্লাম ' অন্যের সাথে তুলনা করেতো তুই নিজের সাথে নিজেই প্রতারনা করলি, তুও তোর মতো, অন্যরা অন্যের মতো । নিজের সব কিছুতে সন্তুস্ট হইতে হবে, নচেৎ জীবনে সুখতো দূরকা বাত, শান্তিভি পাইবি না।' কথা আর আগালো না। কথায় বুঝতে পারলাম আমার কথায় ও খুশি হইতে পারলো না। 
 
উপলব্ধি ৩
স্কুলে থাকতে বিএনসিসি করার সময় মধ্যবয়স্ক একজন হাবিলদার আমাদের ইন্সট্রাক্টর ছিলেন। একবার ফাইলে দাঁড় করিয়ে উনি বলছিলেন " বাবারা, অধৈর্য হইয়ো না। টার্গেটে গুলি লাগাইতে হলে শান্ত থাকতে হবে, ধৈর্য ধরতে হবে, অপেক্ষা করতে হবে সুযোগের জন্য"। সেনাবাহিনীর প্রাক্তন স্নাইপার হিসেবে কাজ করা ওস্তাদ বলছিলেন " শিকারের জন্য কখনো কখনো দিনের পর দিন এক জায়গায় শুয়ে থাকতে হয়, শত প্রলোভনেও প্রলোভিত হওয়া যাবে না, শিকার তুমার মিলবেই"।

উপসংহার
উপরের তিনটা উপলব্ধিটা বেশ কাঁপাচ্ছে। নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করি করি ! জীবন থেকে কত কিছুই না শেখার আছে।



কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।