বাসা পাওয়া বেশ ঝক্কি ঝামেলার ব্যপার। আমার জন্য সেটা ছিলো জীবন মরন সমস্যা। একে ওকে বলি বাসার কথা, সবাই হাঁ বলে কিন্তু কারো কাছ থেকে সারা শব্দটি পাওয়া যচ্ছিলো না। এমনি এক সময় এক বন্ধু আশির্বাদ হয়ে আসলো। ওর কাছ থেকে শুনলাম দুজন বাংলাদেশী নাকি বাসার জন্য বোর্ডার খুঁজছে। উনাদের সাথে কথা বলে ঠিক করলাম যেই শর্তই হোক না কেনো ঐ বাসায় উঠবো।
সে দিন বাসায় কেউ ছিলো না। সবাই যথারীতি আমাকে না জানিয়েই সিডনী গিয়েছিলো। একলা বাসায় সব কিছু গুছিয়ে ট্যাক্সি ডেকে যখন সেই নতুন বাসার দিকে রওয়ানা দিলাম তখন এক অপার্থিব শান্তি লেগেছিলো। মনে হচ্ছিলো পিঠের উপর থেকে বিশাল এক বোঝা নেমে গেলো। ৪ বেড রুমের নতুন বাসায় লোক বলতে আমি আর আরেক বাংলাদেশী সিনিয়র। নতুন হাউসমেটকে নিয়ে ছোট খাটো গল্প লিখে যাবে, গল্প না বলে রম্য রচনা বল্লেই মনে হয় বেশী মানানসই হবে।
নতুন বাসায় যে ঘরে আমার থাকবার ব্যবস্থা হয়েছিলো সেখানে কিছুই ছিলো না। মেঝেতে বিছানা পেতে মেঝেতেই পড়াশোনার ব্যবস্থা। ক্যানবেরার ভয়াবহ শীত তখন আসি আসি করছে। সন্ধ্যা নামতেই হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। হাউসমেট থাকতেন বিশাল লাউন্জে। ওঘরে গ্যাস হিটিং ছিলো। আমার ঘরে কিছুই নেই। ছোট্ট একটা হিটার চালিয়ে কোনোমতে থাকি। আগেই কথা ছিলো রান্না বান্না বা বাজার সদাইয়ে কোনোরকম শেয়ার করবো না। হিজ হিজ হুজ হুজ। অতীত অভিজ্ঞতাই এ স্বীদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছিলো। অহেতুক ঝামলা এড়ানো।
হাউজমেট সারা দিন জোরে জোরে হিন্দি গান শুনেন আর একের পর এক সিগারেট টেনে যান। সিগারেট শেষ হয়ে গেলে ফেলে দেয়া সিগারেটের বাটে যে টুকু তামাক অবশিস্ঠ থাকে তা দিয়ে আবার সিগারেট বানান ! কিভাবে উনার জীবন চলে সেটা জিজ্ঞেস করলে উনি বলেন উনি নাকি কোনো এক সফট ওয়ার কোম্পানীর প্রজেক্ট ম্যানেজার ! ঘরে বসেই নাকি উনার কাজ চলে, সপ্তাহে একবার অফিসে গেলেই নাকি হয় !
আমি আমার মতো থাকি। সকালে ক্লাসে যাই, সন্ধ্যায় কাজে যাই। যেদিন ক্লাস বা কাজ কোনোটাই থাকেনা সেদিন সাইকেল চালিয়ে কাছের শপিং মলের পে ফোন থেকে দেশে ফোন করি। হাড় কাঁপানো শীতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলার মজে যেমন আছে তেমনি আছে কস্ট। দেশে কথা বলার পর সেই কস্ট টুকু থাকতো না।
হাউজমেট আর তার বন্ধু বলেছিলো ঐ বাসা নাকি তারা তাদের কোনো এক আংকেলের কাছ থেকে কিনে নিচ্ছে! কিনে নেবার আগেই উনারা বাসায় উঠে পড়েছেন ! কথাটা বিশ্বাষ করেছিলাম বেকুবের মতো। যদিও এটা ভাঙতে বেশী সময় লাগেনী।
হাউজমেট আর তার সেই বন্ধু পাশের ওয়েস্টফিল্ডের কোলসএ ক্লিনিং সাবকন্ট্রাক্ট এর কাজ করতেন প্রতি রাতে। একদিন বল্লেন আমি চাইলে উনাদের সাথে কাজ করতে পারবো। বেঁচে থাকার জন্য টাকার দরকার ছিলো , রাজি হয়ে গেলাম। রাত ১১ টা থেকে শুরু করে ভোর ৪ টা পর্যন্ত কাজ। হাতে হাতে টাকা দেয়া হবে। প্রথম কিছু দিন উনারা শেখালেন কি ভাবে কাজ করতে হয়। খুব কম সময়েই কাজ শিখে গেলাম। যদিও কথা ছিলো রাত ১১-সকাল ৪ টা পর্যন্ত কাজ হবে কিন্তু কাজ শেষ হতে হতে সকাল ৬ টা বেজে যেতো কিন্তু আমাকে টাকা দেয়া হতো সেই ৫ ঘন্টার। সব কিছু বুঝতে পারলেও নানা কারনে কিছু বলতাম না। এর ফাঁকে সেমিস্টার ফাইনাল হয়ে গেলো। রেজাল্ট ভালোই হলো। একদিন কাজ খুঁজতে খুঁজতে একটা মোটেলে রুম এটেন্ডড্যান্ট এর কাজ পেয়ে গেলাম। উনাদের বলতেই উনারা এমন ভাব করলেন যেনো আমি বিশাল ভুল করতে চলছি ঐ কাজ পেয়ে। আসলে উনাদের উদ্দেশ্য ছিলো উনাদের সাথেই কাজ করি " মুরগা " হয়ে, কম বেতনে বেশী কাজ।
তবে কোলসের কাজটা ছাড়িনি সে সময়ে। মোটেল ও কোলসের দু কাজটাই চালিয়ে গিয়েছিলাম। সারা রাত কাজ করে না ঘুমিয়েই মোটেলের কাজে ছুটতে হতো। কখন সকাল আর কখন রাত হয়ে যায় টেরই পেতাম না। এমনো হয়েছে টানা ৩৬/৩৮ ঘন্টা ঘুমোইনি। এভাবে কাজ করতে করতে কিভাবে যে ৭ টা মাস পার হয়েগেলো টেরই পাইনি। এই ৭ মাসে বলা যায় রাতে ঘুমোনোর সুযোগই হয়নি। দেশে যাবার তাড়া ছিলো, পরের সেমিস্টারের টাকা জোগানের ব্যপার ছিলো। সে এক বিশাল চাপ।
এই সময়টুকুতে রান্না ভালো ভাবে শিখে গিয়েছিলাম। ও'কোনোরের বাসায় প্রথম যেবার বাদা কপি ভাজি করেছিলাম তখন রাজ্যের যতো মশলা আছে সব মশলা দিয়ে এমন এক জিনিস রেঁধে ছিলাম যে মনে হচ্ছিলো বাদাকপি না যেনো গরুর মাংস খাচ্ছি। এক সময় আবিস্কার কলাম দারন রাঁধি আমি। বাদা কপি কুচু কুচি করে হালকা তেলে পেঁয়াজ কুঁচি কাঁচা মরিচ দিয়ে হালকা ভেজে ফেলি।
আমাদের রান্নায় হলুদ মরিচের ব্যবহার কম বেশী থাকেই। রাঁধার সময় মশলা এখানে সেখানে পড়ে যাওয়াটাও স্বাভাবিক। ও'কোনোরের বাসায় থাকতে যতবারই রান্না করেছি ততবারই এমন সাবধানে রান্না করতাম যেনো মাইন ফিল্ডে মাইন অপসারনের কাজ করছি। একটু ভুলেই মাইন ফুটে ভুস। কোনো এক ফাঁকে একবার হয়তো কিছু হলুদ পড়েছিলো চুলোর পাশে, হয়তো সেটা আমারও নয় তবুও নিজ ঘর থেকে শুনতে পাচ্ছিলাম সেই পান্জাবী মেয়ে আমার বন্ধুকে জোরে জোরে এমন ভাবে বলছে যেনো আমিও শুনতে পাই, "হলদি হলদি, হার ঘরমে হলদি"। আজো যখন হলুদ দেখি তখন সে কথা মনে পরে। আমি কিচ্ছু ভুলি না। ভুলতে পারি না।
সে দিন বাসায় কেউ ছিলো না। সবাই যথারীতি আমাকে না জানিয়েই সিডনী গিয়েছিলো। একলা বাসায় সব কিছু গুছিয়ে ট্যাক্সি ডেকে যখন সেই নতুন বাসার দিকে রওয়ানা দিলাম তখন এক অপার্থিব শান্তি লেগেছিলো। মনে হচ্ছিলো পিঠের উপর থেকে বিশাল এক বোঝা নেমে গেলো। ৪ বেড রুমের নতুন বাসায় লোক বলতে আমি আর আরেক বাংলাদেশী সিনিয়র। নতুন হাউসমেটকে নিয়ে ছোট খাটো গল্প লিখে যাবে, গল্প না বলে রম্য রচনা বল্লেই মনে হয় বেশী মানানসই হবে।
নতুন বাসায় যে ঘরে আমার থাকবার ব্যবস্থা হয়েছিলো সেখানে কিছুই ছিলো না। মেঝেতে বিছানা পেতে মেঝেতেই পড়াশোনার ব্যবস্থা। ক্যানবেরার ভয়াবহ শীত তখন আসি আসি করছে। সন্ধ্যা নামতেই হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। হাউসমেট থাকতেন বিশাল লাউন্জে। ওঘরে গ্যাস হিটিং ছিলো। আমার ঘরে কিছুই নেই। ছোট্ট একটা হিটার চালিয়ে কোনোমতে থাকি। আগেই কথা ছিলো রান্না বান্না বা বাজার সদাইয়ে কোনোরকম শেয়ার করবো না। হিজ হিজ হুজ হুজ। অতীত অভিজ্ঞতাই এ স্বীদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছিলো। অহেতুক ঝামলা এড়ানো।
হাউজমেট সারা দিন জোরে জোরে হিন্দি গান শুনেন আর একের পর এক সিগারেট টেনে যান। সিগারেট শেষ হয়ে গেলে ফেলে দেয়া সিগারেটের বাটে যে টুকু তামাক অবশিস্ঠ থাকে তা দিয়ে আবার সিগারেট বানান ! কিভাবে উনার জীবন চলে সেটা জিজ্ঞেস করলে উনি বলেন উনি নাকি কোনো এক সফট ওয়ার কোম্পানীর প্রজেক্ট ম্যানেজার ! ঘরে বসেই নাকি উনার কাজ চলে, সপ্তাহে একবার অফিসে গেলেই নাকি হয় !
আমি আমার মতো থাকি। সকালে ক্লাসে যাই, সন্ধ্যায় কাজে যাই। যেদিন ক্লাস বা কাজ কোনোটাই থাকেনা সেদিন সাইকেল চালিয়ে কাছের শপিং মলের পে ফোন থেকে দেশে ফোন করি। হাড় কাঁপানো শীতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলার মজে যেমন আছে তেমনি আছে কস্ট। দেশে কথা বলার পর সেই কস্ট টুকু থাকতো না।
হাউজমেট আর তার বন্ধু বলেছিলো ঐ বাসা নাকি তারা তাদের কোনো এক আংকেলের কাছ থেকে কিনে নিচ্ছে! কিনে নেবার আগেই উনারা বাসায় উঠে পড়েছেন ! কথাটা বিশ্বাষ করেছিলাম বেকুবের মতো। যদিও এটা ভাঙতে বেশী সময় লাগেনী।
হাউজমেট আর তার সেই বন্ধু পাশের ওয়েস্টফিল্ডের কোলসএ ক্লিনিং সাবকন্ট্রাক্ট এর কাজ করতেন প্রতি রাতে। একদিন বল্লেন আমি চাইলে উনাদের সাথে কাজ করতে পারবো। বেঁচে থাকার জন্য টাকার দরকার ছিলো , রাজি হয়ে গেলাম। রাত ১১ টা থেকে শুরু করে ভোর ৪ টা পর্যন্ত কাজ। হাতে হাতে টাকা দেয়া হবে। প্রথম কিছু দিন উনারা শেখালেন কি ভাবে কাজ করতে হয়। খুব কম সময়েই কাজ শিখে গেলাম। যদিও কথা ছিলো রাত ১১-সকাল ৪ টা পর্যন্ত কাজ হবে কিন্তু কাজ শেষ হতে হতে সকাল ৬ টা বেজে যেতো কিন্তু আমাকে টাকা দেয়া হতো সেই ৫ ঘন্টার। সব কিছু বুঝতে পারলেও নানা কারনে কিছু বলতাম না। এর ফাঁকে সেমিস্টার ফাইনাল হয়ে গেলো। রেজাল্ট ভালোই হলো। একদিন কাজ খুঁজতে খুঁজতে একটা মোটেলে রুম এটেন্ডড্যান্ট এর কাজ পেয়ে গেলাম। উনাদের বলতেই উনারা এমন ভাব করলেন যেনো আমি বিশাল ভুল করতে চলছি ঐ কাজ পেয়ে। আসলে উনাদের উদ্দেশ্য ছিলো উনাদের সাথেই কাজ করি " মুরগা " হয়ে, কম বেতনে বেশী কাজ।
তবে কোলসের কাজটা ছাড়িনি সে সময়ে। মোটেল ও কোলসের দু কাজটাই চালিয়ে গিয়েছিলাম। সারা রাত কাজ করে না ঘুমিয়েই মোটেলের কাজে ছুটতে হতো। কখন সকাল আর কখন রাত হয়ে যায় টেরই পেতাম না। এমনো হয়েছে টানা ৩৬/৩৮ ঘন্টা ঘুমোইনি। এভাবে কাজ করতে করতে কিভাবে যে ৭ টা মাস পার হয়েগেলো টেরই পাইনি। এই ৭ মাসে বলা যায় রাতে ঘুমোনোর সুযোগই হয়নি। দেশে যাবার তাড়া ছিলো, পরের সেমিস্টারের টাকা জোগানের ব্যপার ছিলো। সে এক বিশাল চাপ।
এই সময়টুকুতে রান্না ভালো ভাবে শিখে গিয়েছিলাম। ও'কোনোরের বাসায় প্রথম যেবার বাদা কপি ভাজি করেছিলাম তখন রাজ্যের যতো মশলা আছে সব মশলা দিয়ে এমন এক জিনিস রেঁধে ছিলাম যে মনে হচ্ছিলো বাদাকপি না যেনো গরুর মাংস খাচ্ছি। এক সময় আবিস্কার কলাম দারন রাঁধি আমি। বাদা কপি কুচু কুচি করে হালকা তেলে পেঁয়াজ কুঁচি কাঁচা মরিচ দিয়ে হালকা ভেজে ফেলি।
আমাদের রান্নায় হলুদ মরিচের ব্যবহার কম বেশী থাকেই। রাঁধার সময় মশলা এখানে সেখানে পড়ে যাওয়াটাও স্বাভাবিক। ও'কোনোরের বাসায় থাকতে যতবারই রান্না করেছি ততবারই এমন সাবধানে রান্না করতাম যেনো মাইন ফিল্ডে মাইন অপসারনের কাজ করছি। একটু ভুলেই মাইন ফুটে ভুস। কোনো এক ফাঁকে একবার হয়তো কিছু হলুদ পড়েছিলো চুলোর পাশে, হয়তো সেটা আমারও নয় তবুও নিজ ঘর থেকে শুনতে পাচ্ছিলাম সেই পান্জাবী মেয়ে আমার বন্ধুকে জোরে জোরে এমন ভাবে বলছে যেনো আমিও শুনতে পাই, "হলদি হলদি, হার ঘরমে হলদি"। আজো যখন হলুদ দেখি তখন সে কথা মনে পরে। আমি কিচ্ছু ভুলি না। ভুলতে পারি না।
Wow, great experience. Wish you all the best. Nice to see your blog.
উত্তরমুছুন"হলদি হলদি, হার ঘরমে হলদি: :( :(
উত্তরমুছুনbachelor life...ki r kora aamra o chalai apnio chalaan.....aapnar subject ki?
উত্তরমুছুনঘটনাটা অর্ধ যুগ আগের, সুদূর অতীত। এখন আর ব্যাচলর নই। আমি গণকযন্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেছি।
উত্তরমুছুনWelcome for your experience moment as a bachelor life.
উত্তরমুছুন