সোমবার, ২ মে, ২০১১

অসহ্য ১১টি ঘন্টা

হঠাৎই বুকের ব্যথা। ছোটো ছেলেটাকে নিয়ে ঘরে পায়চারী করবার সময় হঠাৎই ব্যথা। বুঝে উঠতে পারছিলাম না কেনো। তেমন কিছু না ভেবেই সাবধানের মার নেই ভেবে হাসপাতালে গেলাম। হাসপাতালের জরুরী বিভাগে গিয়ে বুকের ব্যথা বলতেই সোজা হুইল চেয়ারে তুলে দিলো। যতই বলি হেঁটে যেতে পারবো ততই সেবিকা বলে তাদের প্রটোকল মেইনটেইন করতে হবে। হুইল চেয়ারে বসিয়ে ভেতরের বিছানায় শুইয়ে ইসিজি করলো, তড়িঘড়ি করে রক্ত নিয়ে পরীক্ষাও করতে দিলো। মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে খুব সম্ভবত ইন্জেকশনও দিয়েছিলো একটা। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েচিলাম টেরই পাইনি।

৩ ঘন্টা পর পাশের ওয়ার্ডে নিয়ে গিয়েছিলো। ঘুম অবশ্য ভেঙে গিয়েছিলো তার আগেই। বিছানায় শুইয়ে এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে নিয়ে যাবার সময় নিজেকে রোগী ভাবতে ভালো লাগছিলো না। ঘন্টায় ঘন্টায় এসে এটা ওটা চেক করছিলো সেবিকারা। মাঝ খানে ওয়ার্ড ক্লার্ক বালিকা এসে ঠিকুজি নিতে ভুলেনি, এখানেও অর্থ। বুকের মাঝে এক গাদা তার লাগানো - মনিটরের টিক টিক শব্দে বড্ড অসহায় লাগছিলো। মাঝে খানে ডিনারে অখাদ্যও গিলতে হয়েছিলো। মশলাহীন- লবনহীন খাবার খেতে খেতে মনে হচ্ছিলো কতকাল ভাত খাই না।

কিছুক্ষন পর পর বাসা থেকে ফোন আসছিলো। উদ্বীগ্ন সহধর্মীনির ফোন পেয়ে যেমন ভালো লাগছিলো তেমনি নিজেকে বড্ড একা লাগছিলো। চারপাশে আমার মতোই এক গাদা অপরিচিত মানুষ শুয়ে আছে; জীবন - মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে যুথরত একদল মানুষ। রাত ১০ টার দিকে এক্স রে করালো। রাত ১২ টা নাগাদ আরেক দফা ইসিজি করা হলো, সাথে রক্ত নেয়া। ঘন্টা দেড়েক পর ডাক্তার এসে বল্লো বড় কোনো সমস্যা নেই। বাসা চলে যেতে পারবো। সাবধানে থাকতে বল্লেন ডাক্তার। ওজন কমাতে হবে। বিড়ি টানা বন্ধ করতে হবে, হাবিজাবী খাওয়া বাদ দিতে হবে। ইত্যাদি ইত্যাদি । ডাক্তার বল্লেন কে নিতে আসবে আমাকে। আমি বল্লাম, এই শহরে এই মধ্যরাতে নিতে আসবার মতো কেউ নেই আমার। নিজেকই ড্রাইভ করে চলে যেতে হবে।

হৃদযন্ত্রের অবস্থা সবসময়ই ভালো ছিলো, এখনো আছে।তারপরো সাবধান থাকতে হবে। মাঝে মাঝে কেনো জানি মনে হচ্ছে বুকের মাঝে চিন চিন ব্যথা। ইসিজি ধরতে না পারলেও আমি ধরতে পারি। নিজের জন্যই বাঁচতে হবে, নিজের প্রিয় জনের জন্য বাঁচতে হবে। বড্ড কঠিন এ পৃথিবীতে ক্লান্ত এই মানুষটি বাঁচতে চায়।

৩টি মন্তব্য :

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।