সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১১

ঋনময় জীবন

কটা বাঙলো টাইপের বাড়ীর স্বপ্ন। সামনে লন, পেছনে ব্যাক ইয়ার্ড। বাড়ীর সামনে পার্ক করা হাল মডেলের গাড়ি। ঘর ভরা দামী সব জিনিস পত্র। পড়নে দামী সুগন্ধতিতে মো মো করা দামী কাপড়। হাতে হাল ফ্যশনের দামী মোবাইল ফোন। ঘি মাখন খাওয়া তেল চুকচুকে স্বাস্থ্যকর চেহারা। চকচকে সজাড়ুর মতো জেল দেয়া চুল । বছর শেষে দেশে বেড়াতে যাওয়া বা আশে পাশেই কোথাও বেড়াতে যাবার পরিকল্পনা। যেনো স্বপ্নের এক জীবন।

এসবের জন্য টাকা দরকার। কুচ পরোয়া নেহী, পাশে আছে ব্যাংক,আছে অন্যান্য অনেক মহাজনী কোম্পানী। টাকা দিতে উদার হস্তে বসে আছে যেনো । মাঝে সাজেই ফোন করে - মেইল করে জানায় টাকা দেবার অধীর আগ্রহের কথা; যেনো দাতা হাতেম তাঈ বসে আছে টাকা দেবার জন্য।

বাড়ী কেনার স্বপ্ন পূরন করার জন্য আছে "হোম লোন"। একটা স্থায়ী চাকুরি, নিশ্চিত আয়, স্থায়ী অভিবাসন আর ক্রেডিট হিস্ট্রি ভালো থাকলেই হোম লোন পাওয়া যায় বেশ সহজেই। বাড়ী কেনার আগেরই "প্রি-এপ্রুভ লোন", বাড়ী পছন্দ করে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বাড়ী কিনে ফেলো। বাড়ী কিনে ফেলা বল্লেও বাড়ী বাঁধা থাকে ঋনদাতার কাছে, ভদ্রভাষায় যাকে বলে মর্টগেজ।

ঘর সাজানোর জন্য নতুন জিনিস পত্র দরকার? বড় বড় দোকানে বাকিতে আসবাব পত্র কিনে ঘর ভরে ফেলো। বড় বড় করে লেখা মুলা ঝুলানো 'নো ইন্টারেস্ট নো ডিপোজিট নো রিপেমেন্ট '। সব কিছুর নিচে পিঁপড়ে আকৃতির ছোট করে লেখা এক গাদা লেখা পড়বার সময় খুব হয়ই কেনার তাগিদে। এখন সময়মতো টাকা পরিশোধ করলেই হলো।

একটা চকচকে হাল মডেলের গাড়ী না হলেই নয়। আছে গাড়ী কেনার জন্য "কার লোন"। ডিলারের কাছে গেলেই "কার ফিনান্সের" হড়েক রকম অফার। ব্যাংক আর মহাজনরাতো আছেনই।

টাকার জরুরী দরকারে আছে "পারসোনাল লোন"। অন্য কিছু কেনার জন্য "ক্রেডিট কার্ড" তো আছেই। একেকজনের কাছে অনেকগুলো করে ক্রেডিট কার্ড। ক্রেডিট কার্ডে হাজার হাজার ডলারে। হাতে নগদ টাকা না থাকলেই বা কি, ক্রেডিট কার্ড চার্জ করো আর কিনে ফেলো।

বিদেশের ঝলমলে জীবনের পেছনে এই ঋনের অবদান অনেক। টাকা দেবার জন্য মহাজনরা আছেন । স্বামী - স্ত্রী উদায়স্ত কাজ করে যে টাকা জমায় তার সবই যায় সেই সব মহাজনদের কাছে। মাস শেষে যা কিছু অবশিষ্ট থাকে তাও যায় বিল শোধে। বিলের কি অভাব আছে ? ইলেক্ট্রেসিটি বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল, ছেলে মেয়ের স্কুলের বিল, প্রাইভেট হেলথ ইন্সুরেন্স বিল , ফোন বিল, মোবাইল বিল, ক্রেডিট কার্ড বিল। বিলের গল্প বলা শুরু করলে লিস্ট আরো বড় হয়ে যাবে।

ধরা যাক বাড়ীর লোন ৩০ বছরে শোধ করা যাবে। মাসিক ইন্সটম্যান্টে দিতে হবে। যতদিন না দেয়া হয় ততদিন বাড়ী মহাজনের কাছে বাঁধা। একটু উনিশ বিশ হলেই " লাভ লেটার " চলে আসবে। গাড়ীর লোন - ঘরের জিনিস পত্রের লোনে সহ আরো লোনতো আছেই। ক্রেডিট কার্ডের জটিল সুদের বাঁধা ঋণের কথা না বল্লেই নয়।

চাকুরী না থাকলে বাড়ীর লোন শোধ হবে না, গাড়ীর লোন শোধ হবে না, বিল শোধ হবে না, বিল দেয়া হবে না। একটার পর এক চিঠি আসতে থাকবে। বাড়ী যাবে, গাড়ী যাবে, সব শেষে যাবে বউ। এজন্য মহাজনরা আবার "ইনকাম প্রটেকশন ইন্সুরেন্স" করতে বলেন। সেখানেও মাসকে মাস টাকা দিয়ে যেতে হয়।

স্ট্যাটাস মেইনটেইন করতে, স্বপ্ন পূরন করতে এভাবেই ঋনের জালে আস্টে পিস্টে বেঁধে যায় জীবন। খুব কম মানুষই এ থেকে মুক্ত থাকতে পারেন। এক সময় ভাবতাম বিশাল বাড়ী - দামি গাড়ী - বড় চাকুরি ! কতোই না সহজ জীবন। এখন বুঝতে পারি এর রহস্য। নিজেও আস্তে আস্তে আটকে যাচ্ছি সেই ঋন নামক মাকরশার জালে। যতোই ছুটতে চাই ততই আটকে পড়ি। এ এক ঋনময় জীবন।

1 টি মন্তব্য :

  1. ঠিক এইকারনেই দেশে চলে যাব, থাকব না এখানে। ঋনের বোঝায় মাথায় নেয়ার সৎসাহস নেই।

    উত্তরমুছুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।