রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০১১

রক্তারক্তি কান্ড

য় পাবার কিছু নেই। এখানে রক্তারক্তি ঘটবে না।

গত পরশু ৩৮ বারের মতো রক্ত দিলাম। বিদেশের মাটিতে ১৩ বার আর দেশে ২৫ বার। অনেক কিছুই গুনে রাখতে ভুলে গেলেও রক্ত দেবার কথা ইচ্ছে করেই যত্ন করে মনে রাখি। কেনো ! উহু , সেটা এখন বলা যাবে না।

প্রথম যেবার রক্ত দেই তখন কলেজে পড়ি। ধানমন্ডির আবাহনী মাঠে সন্ধানীর স্টলে। রক্ত দেবার পর এক গ্লাস গরম কোক আর একটা টি-শার্ট, টি শার্টের লোভে রক্ত যে দিয়েছিলাম সেটা অস্বীকার করছি না এতো বছর পর। রক্ত দেবার পর প্রচুর পানি পান করতে হয় ঘাটতি পূরনের জন্য, দেশে কেনো যে কোক - পেপসি দেয় সেটা বুঝতে পারি না !

দ্বিতীয় বার রক্ত দেই আমার এক খালাকে। ব্রেস্ট ক্যান্সার অপারেশনের জন্য উনাকে বারডেমে রক্ত দিয়েছিলাম। রক্ত ব্যবস্থাপনায় সে সময় রারডেম ছিলো সেরা। রক্ত নেবার আগে কত কথা - কত খাতির, রক্ত নেবার পর আর অপারেশন শেষে সেই যে উনি খোঁজ কবর নেয়া বন্ধ করলেন সেটা এখনো চলছে। তখন খারাপ লাগলেও এখন আর লাগে না। অনেক মানুষ এরকমই হয়।

কলেজের পড়বার সময় একবার ঢাকা মেডিক্যাল সন্ধানী থেকে একটা টিম এসেছিলো । সুন্দরী আপুদের দ্বারা হাতে সেবার সূঁচ ফোটাবার ভয়াবহ খারাপ অভিজ্ঞতা হবার পর ঠিক করেছিলাম আর কোনোদিন ওদের কাছে হাত বাড়াবো না রক্ত দিতে। যদিও এ প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি, অনেক বারই সন্ধানীর কাছে রক্ত দান করতে হয়েছে। যত বারই রক্ত দিয়েছি ততবারই মনে হয়েছে এরা এত কস্ট দেয়া কেনো ! ভেইন খুঁজে পেতে কেনোই বা এতো ঝামেলা পোহাতে হয় এদের !

একবার পাশের বাসার ছোট্ট ছেলেটিকে রক্ত দেবার কথা ছিলো। এলিফ্যান্ট রোডের গলিতে হেঁটে যাবার সময় ছেলেটিকে প্রায়ই দেখতাম বারান্দার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে। যেদিন রক্ত দেবার কথা ছিলো সে দিন শুনলাম ছেলেটি মরে গেছে। কি যে কস্ট লেগেছিলো। ছেলেটির থ্যালাসমিয়া ছিলো। কি সুন্দর দেখতে ছিলো সেই ছোট্ট ছেলেটি, কি বিষন্ন মাখা চোখ। এর পর প্রায়ই মোহাম্মদপুরের রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড সেন্টারে যেতাম রক্ত দিতে। যেখানে রক্ত দিতাম তার পাশেই একটা বড় ঘরে রক্ত দেয়া হতো। মানুষগুলোর রক্ত মারা যাচ্ছে, সারাটা জীবন রক্ত নিয়ে যেতে হবে। কি অসহ্য জীবন ওদের।

কুমিল্লার এক বিখ্যাত ও অনেক প্রাচীন স্কুলের হেড স্যারকে রক্ত দিয়েছিলাম, উনার ডেংগি হয়েছিলো। স্যারের অসুখ সেরে যাবার পর কিভাবে যেনো উনি আমার ঠিকানা যোগার করলেন। একরকম জোর করেই উনার ছেলের বাসায় নিয়ে এক গাদা খাওয়ালেন। রক্ত দেবার পর গ্রহীতা যাতে আমার সাথে যোগাযোগ না করতে পারে তার চেস্টা থাকে আমার। কেউ কৃতজ্ঞ হয়ে এমন কিছু করুক সেটা আমার পছন্দ না। রক্ত দান একটা নিশর্ত দান।

কলেজ পাশ করে অফুরন্ত অবসরে একটা ছোট ব্যবসা শুরু করে দিয়েছিলাম। তেমন আহামরী কিছু না। ফোন - ফ্যাক্সের ব্যবসা। জীবন বাঁচাতে যদিও ব্যবসার কোনো প্রয়োজন ছিলো না তবুও জীবনে চিনতে ব্যবসা বানিজ্য অনেক কাজে লাগে। মাঝে সাজে এক ভদ্রলোক ফোন করতে আসতেন। টিকাটুলীর মোড়ে পানির ট্যাংকির নিচে ছাপড়া ঘরে থাকতেন, এক সময় হরদেও গ্লাস ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন, ফ্যাক্টরি বন্ধ হবার পর ফুটপাতে কাপড় বিক্রি করতেন। উনার নামটা মনে নেই। একবার এরওর কাছে ফোন করে রক্তের জন্য চেস্টা করছিলেন। পিজি হাসপাতালে উনার ব্উয়ের জড়ায়ু ফেলে দেয়া হবে। আমি বল্লাম রক্ত দিবো। পিজি হাসপাতালে রক্ত দেবার অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। যেই লোক রক্ত নেবার দ্বায়িত্বে ছিলো তার ব্যবসা ছিলো রক্তে বেচা। সেই ভদ্র লোক রক্ত না কিনে কেনো দাতা নিয়ে এসেছিলেন তার জ্বালা আমার উপরে ঝেড়েছিলেন প্রচন্ড ব্যথা দিয়ে। টিকাটুলীর সেই ভদ্রলোক বউ এর অপারেশন শেষ হবার পর উনার বাসায় নিয়ে গিয়েছিলেন। ছোট্ট একটা ছাপড়া ঘরে থাকা- সেই ঘরে রাঁধা। ভদ্রলোক একজন বীর বিক্রম।

এভাবে অনেক রক্ত দিয়েছি। জানিই না আমার রক্ত কার ধমনিতে প্রবাহিত হয়েছিলো। বিদেশে এসেও থেমে থাকেনি রক্ত দেয়া। জিনিসটা কেনো জানি নেশার মতো।

চলবে

২টি মন্তব্য :

  1. আপনার পোস্ট এ ভাল,মোটামোটি,খারাপ,জঘণ্য সবি আছে ,খুব ভাল নেই ।পোস্ট খুব ভাল হয়েছে

    উত্তরমুছুন
  2. আমার লেখা যেহেতু 'মোটামুটি থেকে জঘন্য' পর্যায়ে পরে তাই "খুব ভালো" যোগ করতে পারি না। পাঠকের দিকে নজর রেখে " ভালো" যোগ করেছি :)

    উত্তরমুছুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।