সোমবার, ২১ মার্চ, ২০১১

ঠিক কি গালী দিলে আদালত অবমাননা হবে না ?

জ কাল মনে হয় "আদালত অবমাননা" একটি নিত্যকার ঘটনা। লজ্জাবতী পাতার মতোই আদালত আজ কাল এতো বেশী স্পর্শ কাতরতায় ভুগে যে আজ একে ওকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রেখে স্কুলে বাচ্চাদের মতো সবক দেয়, ধমক দেয়। মাঝে সাজে নিজেই স্বতঃপ্রণোদিত রুল (সুয়োমটো) জারি করে তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে ফেলেন। তবে মজার ব্যপার হলো আদালতের উনারা এমন সব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামান যে সব ব্যপারে সরকারের বৃহৎ স্বার্থ জড়িত নেই। মহিউদ্দীন ফারুকের এই রিপোর্ট পড়বার পর মনে হতে পারে ক্রসফায়ার নিয়ে আদালতের সুয়োমটো দেবার পর এর পর কি হলো ! আদালত কি এর ফলোআপ করেছে নাকি সরকারের ধমকে উনারা "চিমশাইয়া" পড়েছেন ! এতো গেলো উচ্চ আদালতের অবস্থা।

আদালতের এ রকম কর্মকান্ডকে সমালোচনা করাও মহা বিপদ। উনারা "বিব্রত" হন বিচারের শুনানী করতে কিন্তু এই বিব্রত হওয়াকে নিয়ে কথা বলতে গেলে উনারা 'অব-মানিত' বোধ করেন। কারন আদালত নাকি স্বার্বভৌম ! সমালোচনার উর্ধে !

আজকের প্রথম আলোর এ সংবাদটা পড়ে ও ছবি দেখে অনেকেই পুলিশকে গালী দিবেন। সেই তিন পুলিশের গালী প্রাপ্যও। তবে আদালতের চেয়ারে বসা ম্যাজিস্ট্রেটের কান্ড দেখলে "আসামী" মানসিক অবস্থা আন্দাজ করা যায়। একজন বিচারক শত প্রমাণ থাকা সত্বেও অভিযুক্তকে জামিন দেবেন, বছরের পর বছর মামলা ঘুড়াবেন কিন্তু বিচার করবেন না ; আর এটার প্রতিবাদ করলেই সেটা আদালত অবমাননা হবে, হাতকড়া লাগিয়ে চ্যাংদোলা করে হাজত খানায় পাঠিয়ে দেয়া হবে। কিছু দিন আগে এক অভিযুক্ত হাকিমের দিকে স্যান্ডেল ছুড়ে মেরেছিলো বছরের পর বছর বিনা বিচারে জেলে আটকে থাকবার জন্য, শত প্রমাণের পরও জামিন না পাবার জন্য। স্যান্ডেল ছুড়ে মারবার জন্য তাকে শাস্তি হিসেবে জেলে পাঠিয়েও দিয়েছিলো সেই বিচারক, কিন্তু ঠিক কি কারনে সেই মানুষটি এতো ক্ষীপ্ত সেটা দেখার প্রয়োজন সে বোধ করেনি। বাহ বাহ চমেৎকার................

ইত্তেফাকে কিছু দিন আগে একটা সংবাদ বের হয়েছিলো। অন্য সব পত্রিকায় সে খবর খুঁজে পাইনি। হয়তো স্পর্শকাতর আদালতকে ঘাঁটাতে চায়নি বলেই পত্রিকাগুলো সেই সংবাদ ছাপায়নি। হাই কোর্টের একজন বিচারপতি  ট্রফিক কনস্টেবলকে কান ধরান সে কেন সিগন্যালের লালবাতি জ্বলে উঠার পর হাত উঠিয়ে তার গাড়ী থামিয়েছিলো। যে কারণে শত-শত গাড়ির সঙ্গে বিচারপতির গাড়িও আটকা পড়ে স্রেফ এই কারণে। ভাগ্যিস বাংলাদেশ তথাকথিত উন্নত দেশ না, হলে উল্টা এই বিচারপতিরই বিচার হতো। যে বিচারপতিরা নিজেদের ঈশ্বর ভাবেন তাঁদেরকে কি আমি মনে করিয়ে দেব অন্য দেশ হলে কি হতো? [ এ অংশ টুকু নেয়া হয়েছে আলি মাহমেদের ব্লগ থেকে]

আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও নিরুংকুশ মান্যতা আমার আছে। কিন্তু বিচারকের আসনে বসা সেই মানুষটির প্রতি সেই শ্রদ্ধাবোধটা অনেক টুকুই টলে গিয়েছে। নিম্ন আদালতে দলীয় আনুগত্যে নিয়োগ পাওয়া বিচারকের পাল যখন টাকার কাছে বিক্রি হয়ে রায় বিক্রি করে তখন সেই বিচারকের প্রতি শ্রদ্ধা টলে না যাওয়াটাই স্বাভাবিক। উচ্চ আদালত যখন ভরে যায় দলীয় আদর্শে নিয়োগ পাওয়া অযোগ্য ও ধামা ধরা বিচারকের তখন সেই শ্রদ্ধাবোধ কি আদৌ টলে যায় না ? অনেকেই হয়তো বলতে পারেন " মিয়া কি প্রমাণ আছে তুমার কাছে যে বিচারকরা দূর্নীতি করে না, আর মিয়ে কুন সাহসে তুমি বিচারকদের দুষী সাব্যস্থ করতেছে ?" আমি বলি, যদি বিশ্বাস না হয় তবে ১ দিন আদালত পাড়ায় যান, যদি ৫% এর বেশী সৎ বিচারক পান তবে আমার নাম সুমন বদলে এলিযাবেথ রেখে দেবো। রায় আজ কাল টাকার কাছে বিক্রি হয়, মানুষের বিচারের দাবী দাবীই রয়ে যায়; পূরন আর হয় না।

এ দেশে রাত বারটার সময় জলপাই ধাক্কায়  সুপ্রিম কোর্ট বসে, কিন্তু বছরের পর বছর মামলা নিস্পত্তি হয় না। টাকা থাকে আগাম জামিন নেয়া যায় হাই কোর্ট থেকে, টাকা না থাকলে জামিতো দূরের কথা শুনানীও হয় না, টাকা ক্ষমতা থাকলে সরাসুরী হাইকোর্ট যাওয়া যায়, টাকা থাকলে ধর্ষন মামলার শত প্রমানিত আসামীও খালাস পেয়ে যায় কিন্তু টাকা-ক্ষমতা না থাকলে কিছুই হবার নয় ।

আদালতকে গালী দিতে চাই না। কিন্তু বিচারকদের গালী দিতে চাই। ঠিক কোন গালী দিলে আদালত অবমাননা হবে না ?

একটা গালী দিয়েই দিলাম  " হড্ডিলা ভাঙত কটিৎ পাকত ঢুকায় দিম ", মেজাজ অনেক খারাপ আজকে বিচার ব্যবস্থা নিয়ে।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।