সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০১১

ব্লাডি ফেয়ার ডিংকুম ১১

আন্ডারগ্র্যাড এ আমার এরকম কোনো আহামরী রেজাল্ট ছিলো না যাতে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেচে এসে আমাকে বৃত্তি দিয়ে বলবে 'এসো বাপু আমাদের এখানে গবেষনা করো বা পড়াশোনা করে পৃথিবীর চেহারা বদলে দাও'। নিজেরও তারা ছিলো অনেক তাড়াতাড়ি বিদেশের একটা ডিগ্রী নিয়ে জীবনকে সামনে এগিয়ে নেবার। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোর্সওয়ার্কে বৃত্তি খুবই কম বিদেশী ছাত্রদের জন্য। রিসার্চ মাস্টার্সে অনেক বৃত্তি থাকলেও ঐ যে বলেছি কারনটা, সে কারনেই সাহসে কুলোয়নি কিছু চেস্টা করবার। নিজের সীমাবদ্ধতা নিয়ে সচেতন থাকা উচিৎ সবার, এতে অনেক উটকো ঝামেলা থাকে বাঁচা যায়। 


দেশ থেকে প্রথম সেমিস্টারের টাকা দেয়া থাকলেও মাথার উপরে চাপ ছিলো পরের সেমিস্টারের টাকা জোগার কোথা হতে করবো। ব্যপারটা বেশ কস্টকর যখন টাকার "উৎস" থাকে দূর্বল বা আদৌ থাকে না। দেশ থেকে নিয়ে এসেছিলাম ১৫০০ মার্কিন ডলার। সেটাই ছিলো সম্বল। বাসা ভাড়া - খাবার খরচ - বাসের মাসিক টিকেট ইত্যাদি হড়েক রকম খরচ করবার পর মাস দেড়েক পর আবিস্কার করলুম ব্যাংকের একাউন্টের অবস্থা খুবই করুন। পড়াশোনার ফাঁকে কাজ করতে হবে সেটা জানা ছিলো কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি সেটা জানা ছিলো না।


কাউকে চিনিও না। যে বন্ধুর কাছে এসেছি সেউ স্বার্থপরতার চরম প্রকাশ দেখিয়ে কেনো জানি এড়িয়ে যায়। বুঝলাম, যা কিছু করতে হবে নিজেকেই করতে হবে। অন্যের ভরসা আমি আমি কখনোই করি না কিন্তু মাঝে সাজে সেটা করতে বাধ্য হতে হয় সেটা জানা ছিলো। একে ওকে কাজের কথা বলি, এখানে ওখানে সিভি পাঠাই কিন্তু কাজ হয় না। বাঙালী যাদের বলেছি তারাও ব্যস্ততার ভানে শুনেও না শোনার ভান করেছিলো , যদিও এদের কারো কারো ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতাও ছিলো। তবু এতো বছর পর এসে বুঝতে পারি এদের কেউ কেউ ইচ্ছে করলে সাহায্য করতে পারতো। এভাবেই মানুষ চেনা যায় ।


একদিন এক ক্লাস মেট আমার অবস্থা দেখে বল্লো আপনার সিভিটা বদলাতে হবে। বলে, "মিয়া কাজতো করবেন কিচেন হ্যান্ড বা চেক আউট অপারেটরের কিন্তু সিভিতে কি প্রোগ্রামিং ভাষা জানেন সেইটা দ্যান ক্যান ? সাদা মাটা সিভি বানান যেইখানে খালি নাম ঠিকানা , মোবাইল ফোন নাম্বার আর ইউনির নাম লেখা থাকপে। অন্য সব বাদ" । তথাস্থা, তাই করলাম। সে এটাও বলেছিলো শনিবারের পত্রিকায় কাজের খবর থাকে। পত্রিকা কিনে শনিবার সকাল ৯ টার পর ফোন লাগাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। তাই করা শুরু করলাম। এখানে ওখানে ফোন করি, সবাই নাম ও নাম্বার রেখে দেয়, কাজের জন্য ডাকা দূরকা বাত, ইন্টারভিউ এর জন্যও ডাকে না। এর পর শুরু করলাম হেঁটে হেঁটে বিভিন্ন রেস্তোরায় সিভি ড্রপ করা। মনে হয় এহেন কোনো রেস্তোরা নাই যেখানে সিভি ড্রপ করি নাই। শহরের কিছুই চিনি না, ম্যাপ হাতে হাঁতি আর রেস্তোরা বা অন্য জায়গা পেলেই সিভি ফেলাই।


এভাবে হাঁটতে হাঁটতে "চারমার্স " নামে এক ছোট্ট এক রেস্তোরায় সিভি ফেলতে গিয়ে মনে হলো কাজ মনে হয় পাবো ! ওয়েট্টেস মেয়েটি সুন্দর হেসে বল্ল বসতে, সে গেলো শেফকে ডেকে আনতে। বয়স্কা মহিলা " সু " ছিলো সেখানকার হেড শেফ। সে বল্লো কোন কোন দিন কাজ শুরু করতে পারবো। আমি বল্লাম অমুক অমুক দিন তমুক তমুক সময়ে। সে নল্লো সেই সন্ধ্যা থেকেই কাজ শুরু করতে।
সন্ধ্যা ৫ - রাত ১০ টা, ঘন্টা ১০ ডলার। দিনের টাকা দিনে। শুর হলো আমার ডিশ ওয়াশার ওরফে কিচেন হ্যান্ড ক্যারিয়ার।
--------------------------------------------------------------------------------------

৬টি মন্তব্য :

  1. apner lekhay aktu bastotar chap paoa jaccche ,mone hoy tara hora kore iti tante chacchen.

    উত্তরমুছুন
  2. এ্কটু ব্যস্ততা লাগল।মনে হল হঠাত শেষ হয়ে গেল

    উত্তরমুছুন
  3. এখানকার জীবনটা বেশ ব্যস্ততার। তেমন অবসর পাওয়া যায় না, যতুটুকু পাওয়া যায় তার মাঝেই নানা কাজের ফাঁকে কিছু লিখবার চেস্টা করি। এজন্যই হয়তো ব্যস্ততার ছাপ চলে আসে ; তবে ইতি টানার ইচ্ছে নেই। যেহেতু ব্লগ সেহেতু ভেঙে ভেঙে লিখি যাতে পাঠক পড়তে পড়তে বিরক্ত না হোন। খন্ডে খন্ডে লেখার এটাও একটা কারন। স্মৃতি থেকে লিখছি বলে মাঝে সাজে খাপছাড়া মনে হতে পারে। অনেক কিছু লেখাও সম্ভবও না নানাবিধ কারনে। পড়ার জন্য ধন্যবাদ। বাংলা টাইপ শিখে ফেলুন না :-) অভ্র ফোনেটিক কিন্তু খুবই সহজ।

    @ ভাঙা পেন্সিল, ভয় আমিও পেয়েছিলাম কিন্তু থেমে থাকিনি। পরে বুঝতে পেরেছিলাম ভয়টুকু ছিলো অহেতুক, সময়ে সব কিছুই ঠিক হয়ে যায়। এটাই বাস্তবতা। ভয়ের কিছু নাই ভ্রাতা।

    উত্তরমুছুন
  4. @সুমন ভাইঃ আপনি সত্যি কথাগুলো সহজ ভাবে বলতে পারছেন দেখে খুব ভাল লাগছে; এখানে অনেককেই যখন দেখি শুরুর দিনের কথাগুলো বেমালুম ভুলে যায় আর সবাইকে ক্রমাগত ভাব দেখাতে থাকে ভাল সময়ের।

    উত্তরমুছুন
  5. যেটা সত্য সেটাই লেখা উচিৎ। অহেতুক ভাব দেখানো বেকুবী। সবার জীবনেই ভালো মন্দ সময় আসে। তবে শুরুর সেই সময়টুকুকে আমি কখনোই "মন্দ সময়" বলবো না, সেটা আমার জীবনের অনেক গূরুত্বপূর্ন একটা অধ্যায় যার সুফল আমি এখন উপভোগ করি।

    উত্তরমুছুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।