বুধবার, ৯ মার্চ, ২০১১

ব্লাডি ফেয়ার ডিংকুম ১০

থা ছিলো ডার্লিং হার্বার থেকে ফেরীতে ম্যানলি বিচে যাওয়া হবে কিন্তু পরে হঠাৎ সবাই ঠিক করলো গাড়ীতে যাবে। ঘন্টাখানেক গাড়ী চালানোর পর ম্যানলি বিচে পৌঁছানোর পর সমস্যা দেখা দিলো পার্কিং নিয়ে। প্রচন্ড ব্যস্ত সময়ে পার্কিং পাওয়া একটা বড় সমস্যা। এটাতো ঢাকা নয় যে, যেখানে ইচ্ছে পার্কিং করে ফেল্লাম।

সমুদ্র অবগাহনের কোনো প্রস্তুতি না থাকলেও সমুদ্রের আহবান অর্গ্রাহ্য করা বড্ড কঠিন। বিচে পৌঁছুবার পর সবার তাড়া দেখা গেলো সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়বার। কক্সবাজারের সমুদ্রের ঘোলা পানি দেখে অভ্যস্থ চোখ প্রশান্ত মহাসগারের তাসমান সাগরের নীল পানি দেখে যে মুগ্ধতার আবেশ পেয়েছিলো সেটা এখনো চোখে লেগে আছে। পরিস্কার নীল আকাশ আর সাগরের নীল পানি যেনো মিতালী পেতেছে দিগন্তে।



পানিতে দাপাদাপি করবার সময় হঠাৎ কি যেনো এসে পিঠে চাবুকের মতো আছরে পড়লো হঠাৎই। হঠাৎ তীব্র এক জ্বালা। পিঠ বেয়ে কোমরের কাছাকাছি লালচে ফুটকি দেয়া লম্বাটে একটা দাগ। তীব্র যাতানায় অন্য সবাইকে বল্লাম, কেউ গা লাগালোনা এতে। আমিও উদ্যাম দাপাদাপির মাঝে ভুলে গিয়েছিলাম সব কিছু। পরে শুনেছি এটা নাকি 'সি লাইস'। মাঝে মাঝে এটা নাকি ভয়ংকরও হয়ে উঠে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য !

গোসল সেরে বিচের পাশের শাওয়ারের মিস্টি পানিতে সাগরের নোনা পানি ধুয়ে ফেলবার পর বিচের পাশ ঘীরে তৈড়ি করা দেয়ালে পা ছড়িয়ে সাগর দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিলো জীবনটা কত সুন্দর। বিচে শুয়ে থাকা সুর্য স্থানরত অর্ধ নগ্ন মেয়েদের দিকে যে চোখ যায়নি সেটা অস্বীকার করছি না। অনভস্থ চোখে সেটা অন্য রকম লাগলেও কেনো জানি মনের মাঝের "কু"টা ডেকে উঠেনি। সবাই যে যার মতো ব্যস্ত। কেউ বা বিচ তোয়ালেতে শুয়ে চামড়া ট্যান করতে ব্যস্ত, কেউ বা বিচ ফুটবল খেখছে, কেউ বা দূরে সার্ফিং । উচ্ছল প্রানবন্ত এক জীবন।

পেটে চামচিকে বুক ডন দিচ্ছিলো। পকেটে ডলারও ছিলো না যে কিছু কিনে খাবো। অন্যদেরও মনে হয় ক্ষুদা লাগেনি। কি আর করা। গাড়ী নিয়ে সোজা পেনরিথে সোহেলের বাসা গিয়ে খুব ক্লান্ত লাগছিলো। জেট ল্যাগের ধাক্কাটা তখনো সামলে উঠতে পারিনি। ওখানে গিয়ে দিলাম এক লম্বা ঘুম। ঘুম যণ ভাঙলো তখন ক্যানবেরা যাবার প্রস্তুতি নিতে নিতে কখন যে মধ্যরাত হয়ে গেলো টেরই পেলাম না। পেনরিথ থেকে এমফাইভ ধরে ক্যানবেরার উদ্দেশ্য যখন যাত্রা শুরু হলো তখন সকাল ১টা কি ২ টা বাজে। ওরা বল্লো যেতে নাকি ৩ কি সাড়ে ৩ ঘন্টা লাগবে।



গাড়ী চলছেইতো চলছেই। মনে হচ্ছিলো কখন ক্যানবেরা পৌঁছুবো। রাস্তায় গোল্ডবার্নের কাছে এসে কফি খাওয়া হলো। আমার চোখে ঘুম কিন্তু ঘুমুতে পারছি না। ছোট্ট গাড়ীর পেছনের সিটে গুটিশুটি মেরে বসে বাহিরে তাকিয়ে দেখছি কোথাও কোনো আলো নেই। নেই কোনো জনপদের চিহ্ন। দেশে ঢাকা ছেড়ে দূরে কোথাও যাবার সময় আশে পাশের বাড়ীগুলো দেখে মনে হতো আমি বা আমরা একলা নই। এখানে মনে হচ্ছিলো আমরা বুঝি অন্ধকার কোনো অনিশ্চিৎ গন্তব্যের দিকে ছুটে ছলছি।


ক্যানবেরার কাছাকাছি যাবার পর পাহারের উপর থেকে প্রথমবারের মতো শহরটিকে যখন দেখলাম তখন মনে হলো দূরে মনে হয় কেউ যেনো লাখ লাখ পিদিম জ্বালিয়ে রেখেছে। শুনেছিলাম শহরটি নাকি খুবই ছোট্ট, আলো দেখে মনে হচ্ছিলো যতটুকু ছোট ভেবেছিলাম ততটুকু ছোট আসলে নয়। ও'কোনোরের বাসায় যখন পৌছুলাম তখন প্রায় ভোর। ঘরে জিনিস পত্র রেখে ম্যাট্রেসে শুয়ে মন হচ্ছিলো ঘুমিয়ে পরি এখনই। ঘরে একটা পুরোনো ম্যাট্রেস, পড়ার টেবিল আর একটা কাবার্ড। এ বাসাটিতে ছিলাম ২ কি ৩ মাস। এক অকথ্য অভিজ্ঞতা।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।