সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

আজ শহীদ সেলিম-দেলোয়ার দিবস

ব্লগে বা অন্যান্য অনেক লেখায় অনেকেই বড় গলায় ১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে ঢাকার রাজপথে ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশের ট্রাক উঠিয়ে দেয়ার কথা বলি। ওই ঘটনায় প্রাণ হারান তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইব্রাহিম সেলিম ও দেলোয়ার হেসেন। আমরা অনেকেই সে দিনকে সেলিম - দেলোয়ার দিবস বলে জানি।
হয়তো অনেকেই ভুলে গিয়েছি ; মনে করিয়ে দেবার জন্য বলছি "আজ সেই দিন"।

আমরা শুধু ভুলেই যাই না , তাদের জন্য কিছু করার কথা ভাবীও না। আমাদের সময়ের দাম আছে না !
এটা ব্যপার না, চুতিয়া  সুশীলদের এটা হতেই পারে। নিজেকে জাহির করার জন্য, চেতনাকে লোক দেখানোর জন্য বা নিছক ব্লগে বা কলাম লেখায় ফালতু বাহাবা নেবার জন্য এসবের প্রয়োজন অসীম। দিবস- টিবস হলো আর দশটা "মালের" মতো এটাও একটা মাল;  ব্যবসার পণ্য।

সাবাস বাঙালীর গোল্ডফিশের স্মৃতি।
----------
কালের কন্ঠে তৌফিক মারুফের রিপোর্ট খানা তুলে দিলাম। কালের কন্ঠের পার্মালিংকের কোনো অবস্থা নাই বলে, কপি-পেস্টই ভরসা।

আজ শহীদ সেলিম-দেলোয়ার দিবস
তৌফিক মারুফ

'স্বৈরাচারমুক্ত দেশ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমার বাবা প্রাণ দিয়েছেন। বাবার লক্ষ্য পূরণ হয়েছে, কিন্তু আমি আর আমার মা এখন অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি, কেউ আমাদের সামান্যতম খোঁজ-খবরও নেয় না।' কলেজছাত্রী ও সাংস্কৃতিককর্মী ডরোথি ইব্রাহিমের এ আক্ষেপ আরো জোরালো হয়ে উঠেছে আজকের দিনটি ঘিরে।

১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে ঢাকার রাজপথে ছাত্র-জনতার মিছিলে ট্রাক উঠিয়ে দেয় পুলিশ। ওই ঘটনায় প্রাণ হারান তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ইব্রাহিম সেলিম ও দেলোয়ার হেসেন। এখনো তৎকালীন ছাত্রনেতাদের কাছে যা সেলিম-দেলোয়ার দিবস হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শহীদ সেলিম ও দেলোয়ার স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হবে বলে জানিয়েছে ছাত্রলীগ সূত্র। এ ছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকেও সেলিমের গ্রামের বাড়ি বাউফলে, বরিশালে তাঁর স্ত্রীর উদ্যোগে এবং দেলোয়ারের পরিবারের উদ্যোগে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় দোয়া-মিলাদের আয়োজন করা হয়েছে। তবে তাঁদের পরিবারের আক্ষেপ_কেবল এই দিবস পালন ছাড়া কখনোই আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের কিংবা সরকারের তরফ থেকে তাঁদের কোনো খোঁজ-খবর নেওয়া হয় না।

ইব্রাহিম সেলিমের একমাত্র সন্তান ডরোথি বলেন 'তখন আমার মাত্র দেড় মাস বয়স ছিল, বাবা আমার মুখে 'বাবা' ডাক শুনে যেতে পারেননি, আমিও তাঁকে ডাকতে পারিনি; এতগুলো বছর কেটে গেল আমার বাবার কিংবা তাঁর মতো যাঁরা মারা গেছেন তাঁদের হত্যার কোনো বিচার হলো না!'

ইব্রাহিম সেলিমের স্ত্রী জেসমিন আক্তার জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি আর শ্বশুরবাড়িতে থাকতে পারেননি, সেখান থেকে কোনোরকম সুযোগ-সুবিধাও পাননি, কোনো রাজনৈতিক বা সরকারের তরফ থেকেও কোনো সাহায্য-সহযোগিতা কেউ করেনি। ফলে তিনি দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল নগরীতে তাঁর বাবার বাড়ির আশ্রয়ে আছেন। অর্থকষ্টে মেয়ের পড়াশুনাসহ সাংসারিক খরচ মেটাতে পারছেন না। ফলে ডরোথিকে সময়মতো প্রয়োজনীয় মানসম্মত শিক্ষাটুকুও দিতে পারেননি তিনি। জেসমিন আক্তার বলেন 'জ্ঞান হওয়ার পর থেকে মেয়েটি সারাক্ষণই কেবল বাবার জন্য হা-হুতাশ করতে করতে বড় হয়েছে, এখনো তার সেভাবেই দিন কাটে।'

এ আক্ষেপের কথা স্বীকার করে ১৯৮৪ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান এমপি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রথম দিকে খোঁজ-খবর নেওয়া হতো কিন্তু পরে যোগাযোগ বিচ্ছন্ন হয়ে যায়। তবে এখন ছাত্রলীগ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এসব পরিবারকে এখন মূল্যায়ন করা উচিত।'
তিনি বলেন, 'ওই সময় আমি ছাত্রলীগের সভাপতি এবং বর্তমান এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানাক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এরশাদ সরকারের পুলিশ বাহিনী আমাদের মিছিলে ট্রাক উঠিয়ে দিলে সেলিম ও দেলোয়ার নিহত হন। এর পর পর আমরা বাউফলে সেলিমের বাড়ি এবং ভাণ্ডারিয়ায় দেলোয়ারের বাড়িতে গিয়েছি।'

১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ওই মিছিলে অংশ নেওয়া আরেক ছাত্রনেতা ও ডাকসুর সাবেক জিএস ড. মোস্তাক হোসেন বলেন, 'এমন পরিবারগুলোর খোঁজ-খবর না নেওয়া, তাঁদের মূল্যায়ন না করা, অসহায় পরিবারে পাশে না দাঁড়াতে পারাটা আমাদের জন্য বড়ই দুর্ভাগ্যজনক।'
 

২টি মন্তব্য :

  1. লেখক আবু বকর সিদ্দিকীর "জলরাক্ষস" পড়েছি। বইটির প্রচ্ছদে জানতে পারি বইটি প্রকাশিত হবার পর এরশাদের সামরিক-শাহী লেখকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। লেখককে সংক্ষিপ্ত বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তার প্রায় বিশ বছর পর এই লেখকেরই কন্যা বিদিশা সেই বিশ্ববেহায়ার অঙ্কশায়িনী হয়েছেন। চেতনা বোধহয় প্রজন্মান্তরে বাধাহীনভাবে প্রবাহিত হয় না। নয়ত পিতাকে নির্যাতন আর অপমানকারীকে আলিঙ্গন করতে কন্যার বাধে না কেন? কোথাকার কোন সেলিম-দেলোয়ার কবে কোন সড়ক দুর্ঘটনায় মরেছিল তা এই ডিজুস প্রজন্ম কি মাথা ঘামাবে?

    আমি লজ্জিত হই বীর-প্রজাতির এক জরা-ক্লিষ্ট উত্তরাধিকার হয়ে।

    উত্তরমুছুন
  2. আমিও লজ্জিত হই তবে আশা হাড়াই না কখনোই। চেতনা "লব্ধ" , এটা বংশগতভাবে আসে না বলেই আশে পাশে অনেক ব্যতিক্রম দেখতে পাই। পড়বার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।, মন্তব্য করবার জন্যতো অবশ্যই।

    উত্তরমুছুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।