রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

পুলিশ নামা

ষাটের দশকে পুলিশকে কটাক্ষ করে ছন্দে ছন্দে শ্লোগান দেয়া হতো " পুলিশ তুমি যতই মারো, বেতন তোমার দুইশ বারো "। গত চার যুগে বুড়িগঙ্গায় অনেক পানি গড়িয়েছে। পুলিশের বেতন এখন আর সেই দুইশ বারো নেই, কিন্তু পুলিশের বেতন কম এজন্য পুলিশ দূর্নীতি করে এরকম একটা অজুহাত সব সময়ই দেয়া হয়।

দেখা যাক, পুলিশ আসলে কত বেতন পায়। পুলিশের জন্য সরকারের আলাদা বেতন স্কেল না থাকলেও বেতন ভাতা নির্ধারনের জন্য আলাদা ভাবে একটি স্কেল বর্ননা দেয়া আছে যা এখানে পাবেন।
প্রথমেই বলা দরকার, পুলিশে তিন পর্যায়ে নিয়োগ দেয়া হয়। স্বভাবতই প্রারম্ভিক বেতনও শুরু হয় তিন ভাগে।

পুলিশ কন্সটেবল চাকুরি শুরু করে জাতীয় বেতন স্কেলের গ্রেড ১৭ থেকে যা ৳৪৫০০ - ২৪০*৭-৬১৮০-ইবি-২৬৫*১১-৯০৯৫,
সাব ইন্সপেক্টর শুরু করে গ্রেড ১১ থেকে যা ৳৬৪০০ - ৪১৫*৭ - ৯৩০৫ - ইবি -৪৫০* ১১-১৪২৫৫ এবং এএসপির শুরু হয় গ্রেড ৯ থেকে যা ৳১১০০০ - ৪৯০ * ৭ -১৪৪৩০ -ইবি -৫৪০*১১ - ২০৩৭০।
সর্বোচ্চ পদের আইজি পান ৳৪০০০০ ( নির্ধারিত ) যা গ্রেড ১ এর বেতন।

পুলিশ বেতনের পাশাপাশি বিশেষ কিছু ভাতা পায়, যা জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৯ অনুসারে নিম্মরূপ;

কন্সটেবল থেকে শুরু করে ইন্সপেক্টরা ঝুঁকি ভাতা পান ৳ ৫২০
কন্সটেবল থেকে শুরু করে সাব ইন্সপেক্টর চুলকাটার ভাতা পান ৳৬৫
এএসপি এবং এর উপরের কর্মকর্তারা প্রারম্ভিক কিট ভাতা পান ৳ ৮২৪০ এবং বার্ষিক কিট ভাতা (নবায়ন) হিসেবে পান ৳৫০৭০।
ইন্সপেক্টররা ( আন আর্মড ) প্রারম্ভিক কিট ভাতা পান ৳৪১১৯ এবং বার্ষিক কিট ভাতা (নবায়ন) পান ৳৩৩৮০।

কন্সটেবল থেকে শুর করে সাব ইন্সপেক্টরা বিনা মুল্যে পোষাক পান সরকার হতে যার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠা নিত্তকার ব্যপার। এর উপরের পদের কর্মকর্তারা পোষাক ভাতা পান না ও নিজের খরচেই তাদের পোষাক কিনতে হয়।

পুলিশের সব সদস্য ( কন্সটেবল - আইজি ) সরকার থেকে সমান হারে, সরকার এ ক্ষেত্রে ভূর্তকি দিয়ে থাকে বিপুল পরিমানে।

যেখানে আবাসনের ব্যবস্থা আছে সেখানে পুলিশ সদস্যরা সরকারী হারে বেতন থেকে বাসা ভাড়া কাটা হয় কিন্তু যেখানে বাসার ব্যবস্থা নেই সেখানে সরকারী নিয়ম অনুসারে অন্যান্য সব সংস্থার মতোই পুলিশও সমান হারে বাসা ভাড়া পেয়ে থাকেন।

আরো কিছু ভাতা আছে যেমন ট্রাফিক পুলিশ ভাতা, পার্বত্য অন্চল ভাতা, পুলিশ একাডেমী ভাতা, ডিটেকটিভ স্কুল ভাতা, পুলিশ স্টাফ কলেজ ভাতা ইত্যাদি যেগুলোর পরিমান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এগুলোর পরিমান নগন্য।

মুলত পুলিশের জন্য বিশেষ ভাতা ব্যতিত অন্যান্য সব সুযোগ সুবিধা ও বেতনের হার এবং এর বিভিন্ন প্রবৃদ্ধি সরকারী অন্যান্য সব সংস্থার মতোই।

উচ্চতর বেতন স্কেলে পদোন্নতি, সিলেকশন গ্রেডে বেতন ও টাইম স্কেল অন্যান্য সব সরকারী সংস্থাগুলোর মতোই একই নিয়ম মেনে চলে।

বলা দরকার, একজন পুলিশ কন্সটেবল চতুর্থ শ্রেণীর পদমর্যাদা ভোগ করেন, এসআই তৃতীয় শ্রেণীর (বর্তমানে ২য়), ইন্সপেক্টর ও এএসপি প্রথম শ্রেণীর।

শ্রম আইন অনুসারে কর্মঘন্টা পুলিশের জন্য প্রযোজ্য নয়। পুলিশকেবলা হয় ২৪ ঘন্টার চাকুরি। অন্যান্য সংস্থায় যেখানে ৮ ঘন্টার কর্মদিবসের ব্যবস্থা আছে সেখানে একজন পুলিশ সদস্যকে দৈনিক ১৫ - ১৬ ঘন্টা কাজ করতে হয় অতিরিক্ত কোনো ভাতা বা সুবিধা ছাড়াই।

একজন পুলিশ কন্সটেবল তার চাকুরি জীবনে টাইম স্কেল পেয়ে সর্বোচ্চ গ্রেড ১০ এ পৌঁছুতে পারেন , সাব ইন্সপেক্টরা সেখানে গ্রেড ৯ পর্যন্ত। এএসপি দের ক্ষেত্রে তা গ্রেড ১ ।

পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পুলিশের বেতন সরকারের অন্যান্য সব সংস্থার সমান, তার সাথে যুক্ত হয় বিশেষ ভাতা। এ ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর বেতন স্কেল দেয়া গেলো , সাথে রেশন স্কেল। পুলিশের রেশন স্কেলের তথ্য যোগার করা সম্ভব হয়নি। সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রে যথারীতি অস্বচ্ছতা তাদের বেতন ও ভাতার বিবরনে। ননকমিশন্ড ও জেসিও দের বেতনের স্কেল তাদের সাইটে দেয়া নাই যথারীতি।

কথা হলো, ঠিক কত বেতন দিলে 'পুলিশের বেতন কম এজন্য দূর্নীতিবাজ' এ দোষ ঘুঁচবে ?

বিঃদ্রঃ এটা কোনো গো + এষনা না , আশ পাশ থেকে জেনে , গুগলিং করে কিছু লেখা। অন্যরা ভুল শোধরিয়ে ও তথ্য যুক্ত করলে বাধিত হবো।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।