মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১০

ব্লাডি ফেয়ার ডিংকুম ৯

২টি মন্তব্য :
দূপুরে বাজার সদাই করবার জন্য পেনরিথের কোলসে গেলাম। সুপার মার্কেট এতো বিশাল হবে সেটা কল্পনাতেই ছিলো না। যে দিকে চোখ যায় শুধু হড়েক রকম প্রোডাক্ট, হাত ছানি দিয়ে ডাকছে আয় আয় আমায় কিনে নে ! ঢাকায় সে সময় মাত্র সুপার মার্কেট গড়ে উঠছে। কোনো বহুতল বিল্ডিং এর দু একটা ফ্লোর বা মার্কেটের বড় সরো ফ্লোর নিয়ে গড়ে উঠা সুপার মার্কেট। মহল্লার মুদির দোকান দেখে অভ্যস্থ চোখ সেগুলো দেখেই অবাক হতো, আর পেনরিথের সেই বিশাল সুপার মার্কেট দেখে ভড়কে যাবারইতো কথা।

সুপারমার্কেটর সেল্ফে থরে থরে সাজানো জিনিস পত্র দেখে মনে হচ্ছিলো কোনটা ফেলে কোনটা নেবো। ডলারকে টাকায় বার বার কনভার্ট করা দেখে সবাই হাসছিলো, আমার কিন্তু মনে হচ্ছিলো জিনিসগুলো এত দামি কেনো ! কি আর করা। সোহেলকে দেখলাম ১ টা রশুন, ৩ টা পেঁয়াজ, ৪ টা আলু -- এভাবে কিনতে। দেশে এভাবে কিনলে হয়তো দোকানদার পাগল ঠাওরাতো।

দূপুরের খাবার দাবার সেরে সবাই মিলে গেলাম সিডনীর ডার্লিং হারবার বেড়াতে। বন্ধু পত্নীর শখ মনো রেলে উঠবে ! মনোরেলে সিডনী সিবিডির চারপাশ ঘুড়ে ডার্লিং হারবারে নেমে চোখ ধাঁধানো সব রেস্টুরেন্ট, চক চকে ঝকঝকে দোকান পাটে তথাধিক দামি জিনিস পত্র দেখে কিছুটা অসহায় যে লাগেনি সেটা বল্লে মিথ্যে বলা হবে।

দিনটি ছিলো ১৪ ই ফেব্রুয়ারী, ভ্যালেন্টাইনস ডে। ডার্লিং হারবারে প্রিয়তমাকে নিয়ে ব্যস্ত সবাই মধ্যাহ্ন ভোজনে। সব কিছু দেখে দেশে রেখে আসা মানুষটির কথা মনে পড়ছিলো। কেনো জানি বেড়াতে ভালো লাগছিলো না সে সময়টুকুতে। বার বার দেশের কথা মনে পড়ছিলো।

সিডনীর আকাশ ছোঁয়া ভবনগুলো দেখে মন হচ্ছিলো এরা বুঝি আকাশ ছোঁয়ার প্রতিযোগীতায় মত্ত। প্রথম বারের মতো কোনো উন্নত দেশে আসলে যা হয় সেটিই হচ্ছিলো আমার মাঝে। পথে ঘাটে প্রেমিক প্রেমিকার প্রকাশ্যে চুম্বন নিজের মাঝে সনাতন চিন্তাচেতনাকে বার বার ধাক্কা দিচ্ছিলো। এভাবেই কালচারাল শকের প্রথম ধাক্কাটা খাই।

এর পর সবাই মিলে যাই ম্যানলি বিচে। কোনো রকম প্রস্তুতিই ছিলো না, হুট করেই যাওয়া। ভারত মহাসগার দেখিছিলাম, দেখা হলো প্রশান্ত মহাসাগরের সান্নিধ্য পাওয়া।

রবিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১০

ব্লাডি ফেয়ার ডিংকুম ৮

কোন মন্তব্য নেই :
সেদিনের সন্ধ্যাটা ছিলো অন্যরকম। কেমন যেনো সেটা বলে বোঝাতে পারছি না। টার্মিনাল থেকে হেঁটে হেঁটে বন্ধুর গাড়ি পর্যন্ত আসতে মনে হচ্ছিলো আকাশটা কতো পরিস্কার। ফেব্রুয়ারীর মৃদুমন্দ আবহাওয়া মন্দ লাগছিলো না।

গাড়িতে বসে বাসায় ফোন দিলাম। এখনো মনে আছে ১ মিনিট ১৬ সেকেন্ড কথা বলেছিলাম। এটাও মনে আছে, মোবাইলে এই অল্প সময় কথা বলার জন্য যে ডলার টুকু খরচ হয়েছিলো সেটার জন্য সেই কন্জুস বন্ধুর আত্মায় হয়তোবা দু এক খান ঘাও লেগেছিলো। চারদিকে ঝলমলে আলো, হড়েক রকম গাড়ি। নীড় ফেরায় ব্যস্ত মানুষগুলোর গাড়ী পিঁপড়ের সারিরে মতো এই ধীরে এই জোরে এগিয়ে চলছে। তাদের মাঝে আমি ও আমরা এবং আমাদের গাড়ি।

ওয়ালীপার্ক বলে এক সাবার্বে আমার এক বন্ধুর বন্ধুর বাসা ছিলো, সে রাতে ওখানেই উঠেছিলাম। যদিও ইচ্ছে হচ্ছিলো সোহেলের বাসাতই উঠি। প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছিলো সেময়, ইচ্ছে হচ্ছিলো বিছানায় শুয়ে টানা একটা ঘুম দেই মরার মতো। ওয়ালীপার্কে যে বাসায় ইঠেছিলাম সে বাসায় রাতুল নামে এক ছেলে তার আরেক ছেলের সাথে শেয়ার করে থাকতো। দুজনই ফোর্সড ব্যাচেলর, চরম অগোছালো একটা বাসা।

ক্লান্ত শ্রান্ত মানুষটি যখন ঘুমোনোর জন্য আঁতিপাঁতি করছে বিছানার খোঁজে তখন সাথের বন্ধুরা ব্যস্ত আড্ডায়। কারো মনে হয় এতটুকু বোঝার ক্ষমতা হয়নি সে একটা মানুষ হাজার হাজার মাইল ভ্রমন করে এসেছে, তার একটু বিশ্রাম দরকার। কোথা হতে কোনো এক লেবানিজ দোকানের হালাল পিজা নিয়ে আসা হলো রাতের খাবারের জন্য সাথে হারাম ওয়াইন। কি অদ্ভুত বৈপরত্ব মানুষের। পিজা খেলাম, ওয়াইন পান করলাম না। হালাল পিজা খাবার জন্য সেকি ঈমানী জোশ সেই সাথে মজাক করবার জন্য ওযাইন, বাহ !!

বাবার এক বন্ধুর মেয়েকে ফোন দিলাম, বল্লাম আপু সিডনী এসেছি। উর্মি আপা উনার বাসায় কেনো উঠলাম না বা কেনো আগে ভাগে জানালাম না সেজন্য একটু মাইন্ড করেছিলেন মনে হয়েছিলো। বল্লাম পরের বার যখন আসবো তখন অবশ্যই উনার সাথে দেখা হবে।

ঘুমোতে ঘুমোতে মধ্যরাত হয়ে গেলো, সময় তখন ৩ কি ৪ টা হবে। ঘুম যখন ভাঙলো তখন ঘড়িতে সকাল ৯ টা। নাস্তা না করেই সোহেলের বাসা পেনরিথের দিকে রওয়ানা দিলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম খুব কাছেই হবে বাসা, পরে দেকি যেতে যেতে প্রায় ঘন্টা খানেক লেগে গেলো। ওর বাসায় এসে শান্তি পেলাম, মনে হলো নিজের বাসায় এলাম।

শুক্রবার, ২২ অক্টোবর, ২০১০

অভিজ্ঞতা বলে

1 টি মন্তব্য :
অভিজ্ঞতা বলে, বিপদে পাশে দাঁড়ানোর মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। অভিজ্ঞতা এটাও বলে, মাঝে সাজে বিপদে পড়া উচিৎ সবারই, এতে বন্ধু চেনা যায়। দুধের মাছি বলে প্রবাদটাতো আর হাওয়ায় ভেসে আসনি।

অনেকেই আমায় দোষ দেয়, আমি নাকি সবকিছু বড্ড নিজের কাছে চেপে রাখি। অভিজ্ঞতা বলে , সবাইকে সব কিছু বলা যায় না। সমস্যায় কেউ হয়তো উদার মনে সাহায্যে চলে আছে আগপিছু না ভেবেই, কেউবা সাহায্য করবার ভান করে, কেউবা দূর থেকে মিটি মিটি হেসে খেলা শেষ হবার অপেক্ষায় রয়। অভিজ্ঞতাই বিপদের বন্ধু চিনিয়েছে আমায়।

এটাও বুঝতে পারি কেউ হয়তো মনে প্রাণে চাচ্ছি কিন্তু নানাবিধ সমস্যা বা সীমাবদ্ধতার কারনে তার পক্ষে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। এটা বোঝার ক্ষমতা হয়ছে সময়ে। বিপদে আপদে - সুখে দূঃখে এভাবেই বন্ধু চিনেছি।

নিজ পিতাকে দোষ দেই কেনো তার বন্ধু নেই, কেনোইবা উনি হাতে গোনা মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখেন। আজ এই বয়সে এসে ঠেকে ঠেকে শিখতে পারছি কেনো কেনো !!?? পিতাকে দোষ দেবার জন্য মনের মাঝে অন্যরকম অনুশোচনা জাগে। নতুন এক উপলব্ধি তৈড়ি হয়।

নিজে নিজেই সব সমস্যার সমাধান করবার চেস্টা করি বলে বন্ধুদের অনেকেই রাগ করে বা করেছে অতীতে। অভিজ্ঞতা বলে সমস্যার সমাধান নিজেকেই করতে হয়, প্রকৃত বন্ধুরা হয়তো সেই সমাধানকে সহজতর করে দেয় বা যখন কোনো কিছুই করবার থাকে না তখন পাশে এসে মানসিক প্রশান্তি জাগায়, সাহস জোগায়।

কেনো এই ব্লগ লিখছি হঠাৎ করে !
আমি কি সমস্যায় পড়েছি ? উত্তর হতে পারে দুটোই; হাঁ ও না। যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি সেটা অবশ্যই কেটে যাবে অতীতের আর দশটা বড় সমস্যার মতোই। হয়তো এই সময়ে কিছু প্রকৃত বন্ধু পাবো , হয়তো বন্ধুর ভেক ধরা কাউকে বন্ধু তালিকা থেকে বাদ দেবো। প্রাপ্তির খাতায় এটাইবা কম কিসের ?

বিদেশে যখন আসি তখন বাবা- মা অনেক চিন্তায় ছিলেন কিভাবে সবকিছু সামলাবো। অর্ধযুগ পেড়িয়ে এসে পেছনে তাকিয়ে দেখি সবকিছুতো ভালোভাবেই সামলিয়ে উঠেছি। হয়তো কিছু অতৃপ্তি রয়ে গিয়েছে কিন্তু প্রাপ্তির পরিমাণ অগুনতি।

জীবনটাই একরকম যুদ্ধের মাঝ দিয়ে যায়। কখনো জয়, কখনো পরাজয়। এভাবেই কেটে যায় আমাদের এই সব দিন রাত্রি।

সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০১০

কেরম কেরম

কোন মন্তব্য নেই :
কাল থেইকাই শরীলটা জানি কেরম কেরম কর্তেছিলো। তাও কামে গেলাম। কামের টাইমেও ভাল্লাগতাছিলো না।  বাসায় আইসা মনে হইলো শরীলডা জানি ভাইংগা পড়লো। বিছনায় শুইয়া শুইয়া কুঁকাঁ করি। বুকটায় কেরম জানি ব্যথা। চাইপা চাইপা ধরে। ডর খায়া গেলাম। জটিল কেইছ নাতো ! ফ্যামিলিতে আবার হাটের রোগের হিস্ট্রি আছে।
জিপিরে ফুনাইলাম, তেনায় বিজি আছেন। কাইলও নাকি ফুল্লি বুকড !!

হসপিটালে যাইতে ডরাই। ক্যঙারুর দেশে হালার সবই ভালো ‌তয় ইমারজেন্সিটা খতরনক। লাইন ধইরে বইসা থাকতে থাকতে সন্ধ্যা থেইকা সকাল হয়া যায় তবুও ডাক আসে না। আমার অবস্থা এরম না যে এম্বুলেন্স কল করুম আর আমারে তুইলা নিয়া যাইবো আর সোজা ভিত্রে নিয়া টেসটুস করা শুরু কর্বো।

আফটার আওয়ার ক্লিনিকে কল দিলাম। কইলো সন্ধ্যা ৯:৩০ এ যাইতে। ১০ মিনিট আগে পৌঁছায়া ভাবলাম বেশিক্ষন অপেক্ষা করন লাগবো না। তার পরো ৪০ মিনিট পড়ে ডাকতরের ডাক পাইলাম। বুড়ি ডাকতর এই খান ঐখানে টিপ টুপ দিয়ে, এক গাদা প্রশ্ন কইরা , কিবোর্ড বাজি কইরা কইলো সমস্যার কিছু নাই। দিলে শান্তি পাইলাম অনেক। রিব কেজের মাসল পেইন। দুইটা ওষুধ দিয়া কইলো সপ্তাহ খানেক খাইলে ভালো হয়া যাবে।

বাসায় আসার সময় দেখি রাস্তায় হালায় চুরও নাই। ১০:১৫ এ এরম মরার মতো তব্দা মাইরা যায় ন্যাশন ক্যাপিটাল। স্পিডোমোটারে তাকায়া দেখি আমি স্পিডিং করি। ব্রেকা পা দিয়া ৮০ তে নামায় আনি গাড়ি।

মনডা ভালোই এখন।আমার হালার  হাট ভালোই আছে।

শনিবার, ৯ অক্টোবর, ২০১০

আমার বাবালার দ্বিতীয় জন্মদিন

কোন মন্তব্য নেই :
 কি দ্রুত সময় পার হয়ে যায়। মনে হয় এইতো সেদিন । দিব্যের প্রথম জন্মদিনে অনেককেই আনন্ত্রন জানিয়েছিলাম, এবার কাউকেই বলিনি( আসলে ইচ্ছে করেই বলা হয়নি)। শুন্যের সাথে যুথবদ্ধতা।


কাজের ফাঁকে হুট করে কেক কেনা, ছেলের জন্য ছোট্ট একটা খেলনা, সন্ধ্যেবেলা তিনজনে মিলে কেক কাটা আর "রিচ ফুড" খাওয়া। এই নিয়েই সুন্দর একটা সন্ধ্যা।

  দুদিন ধরে শুধু ঘুড়ছিই, ১০০ কিমি/ঘন্টায় ছুটে চলা।

 বিঃদ্রঃরিচ ফুড নিয়ে একটা গল্প আছে, সেটা অন্য একদিন বলা যাবেখন।


শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০১০

নয়া জিনিসের স্বোয়াদই আলিদা

কোন মন্তব্য নেই :
নিজেকে মাঝে মাঝে পিঁপড়ে মানব বলে মনে হয়। পিঁপড়ে যেমন প্রচন্ড পরিশ্রম করে ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য সন্চয় করে  আমিও তেমন প্রচন্ড পরিশ্রম করে সন্চয় করি, হয়তো সেটা খাদ্য নয়; অন্য কিছু। মাঝে মাঝেই পিঁপড়ের কস্টের ধনও বানের পানিতে ভেসে যায়, এমনটি আমারও হয়। কোথায় যে চলে যায় কস্টার্জিত সন্চয় , নিজেও বুঝতে পারি না।

একটা গাড়ী কিনলাম গতকাল। নতুন কিছু কেনার স্বাদই আলাদা। অন্য রকম তৃপ্তিবোধ চলে আসে, যেমনটি এখন হচ্ছে।

ওম শান্তি। জগতের সকল প্রাণি সুখি হোক।