মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১০

বাবালা আমার

পিতা হওয়ার অনুভূতি সবসময়ই অন্যরকম। সেটা পৃথিবীর অন্য কোনো অনুভূতির সাথে তুলনা করা যায় না। এই অনুভূতিকে ফুটিয়ে তোলার জন্য যতই অলংকার ব্যবহার করা হোক না কেনো মনে হয় কোথায় যেনো ফাঁক রয়ে গেলো, প্রতিনিয়তই মনে হয় এই বুঝি আরেকটু লেখা যেতো।

৪ ডিসেম্বর ২০১০ এর সকাল ৮:১৮ যেনো অন্য রকম একটি সকাল। কোনো রকম প্রস্তুতিই ছিলো না আমাদের মাঝে। আমরা দিন গুনছিলাম সামনের দুটি মাস কিভাবে যাবে তার পরিকল্পনা করে।

নতুন বাসা গোছানোর  ব্যস্ততার মাঝে হঠাৎই হাসপাতালে যাবার তাড়া । ডাক্তার বল্লো রাতটি হাসপাতালে থেকে যেতে। দিব্যকে নিয়ে যখন বাসায় এলাম তখনও জানতাম না কি অপেক্ষা করছে সামনে। ভোরে একজনকে দেশের উদ্দেশ্য বিদেয় দিয়ে যখন বাসা ফেরার পরিকল্পনা করছি তখন হাসপাতালে যাবার তাড়া পেলাম। ছেলেকে এক বাসায় রেখে তড়িঘড়ি করে বাসায় এসে যেই না গরম গরম পরোটায় দু কামড় দিয়েছি সেই মাত্র মিডওয়াইফ এর ফোন, আমাদের দ্বিতীয় সন্তান আসছে পৃথিবীতে। পড়িমড়ি করে ছুটে যাবার আধেক ঘন্টার মাঝেই "শুভ্রের" কান্না, সাথে কি আমিও একটু কেঁদেছিলাম?

পৃথিবীর অনেক কিছুই হিসেব মতো হয় না। "শুভ্রের" আসার কথা ছিলো সেই ফেব্রুয়ারীতে, সে চলে এলো ডিসেম্বরে। 'থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে , দেখবো এবার জগৎ টাকে' গান গাইতে গাইতে ছেলে আমার আর তর সইতে পারলো না। চলে এলো আমাদের মাঝে।

কোনো রকম প্রস্তুতিই নেই তখন আমাদের মাঝে। অর্ধযুগ পর পরিপূর্ন বেকার আমি। ছেলের নামও ঠিক করা হয়নি। হাতে টাকাও নেই বাড়তি কিছু খরচ করবার মতো। পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই যে একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে মমতায়। সব কিছুই নিজের উপরে। তারপরো কোনো কিছু থেমে থাকেনি। আল্লাহর রহমতে সব কিছু এতো সুন্দর ভাবে সব কিছু হয়েছিলো যে মনেই হয়নি আত্মীয় স্বজন হীন এই দেশে একলা মানুষটি একবারের জন্যও বিচলিত হবো।

জন্ম মুহুর্তগুলো ছিলো কেমন যেনো অন্যরকম। দু মাসের প্রি ম্যাচিউরড ছেলে আমার কাঁদছে, বউ বলছে কাঁদছে না কেনো ! মিডওয়াইফ ম্যাগি অভয় দিয়ে বলছিলো ঐ যে তোমার লিটল ওয়ান কাঁদছে। নার্সরা তখন ব্যস্ত ছোট্ট পুতুলের মতো ছেলেটিকে পরম মমতা ও দক্ষ হাতে ইনকিউবেটরে ঢোকাতে ও সব রকম লাইফ সাপোর্ট এর ব্যবস্থা করতে। ছোট্ট পুতুলটিকে ওরা নিয়ে গেলো ইন্টেনসিভ কেয়ারে। ডেলিভারী স্যুটে শুধু আমরা তিন জন।

প্রতিটি জন্ম মুহুর্তই স্বর্গীয়। তা সে বাগানে সদ্য ফোটা বুনো ফুল হোক আর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়া কিচির মিচির করা এক দল শিশু হাঁসের ছানাই হোক।

আমার ছোট্ট বাবাটি ভালো আছে। কোনো রকম সমস্যা নেই। দেখতে দেখতে কিভাবে যেনো ২৪ টা  দিন পার হয়ে গেলো টেরই পাচ্ছি না। প্রতিদিন সময় করে যাই বাবাকে খাওয়াতে। ডাক্তার বলেছে আর দু হপ্তা থাকতে হতে পারে। বাবালাকে যখন বুকে জড়িয়ে ধরি তখন কি যে ভালো লাগে। বাবালার কানে কানে আজ বলেছি, ' বাবা তোমার কত ভাগ্য তুমি এ দেশে জন্মিয়েছো, তোমার জায়গায় আমি হলেতো মরেই যেতাম"।

ছেলে আমার ভালো আছে। ছেলের মা ভালো আছে। হয়তো জন্মে মিস্টি খাওয়ানো হয়নি কাউকে, হয়তো বলার মতো তেমন কিছু কেনাও সম্ভব হয়নি ছোট বাবালার জন্য তারপরো বাবা মার ভালো বাসা পরতে পরতে জড়িয়ে আছে, দাদা - দাদু - নানা - নানুর দোয়া ঘীরে আছে তোমাকে। মানুষের মতো মানুষ হও বাবালা আমার।

৫টি মন্তব্য :

  1. বাবলার জন্য অনেক অনেক আদর এবং নব্যপিতামাতাকে আনেক অনেক অভিনন্দন।

    উত্তরমুছুন
  2. মন্তব্যদাতা দুজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ।
    আপাতত ছবি দিতে চাচ্ছি না। ইনকিউবেটরের মাঝে হরেক রকম তারে আস্টে পিস্টে বাঁধা আমার জানের টুকরার ছবি অনেকের কাছে ভালো লাগবে না। ও বাসা আসুক, তার পর ছবি অবশ্যই দেবো।

    উত্তরমুছুন
  3. পিতা না হলে সন্তানের প্রতি ভালবাসা অনুভব করা যায় না। অনেক অভিনন্দন সুমন ভাই, নতুন সন্তানকে নিয়ে আনন্দে থাকুন, শুভকামনা রইলো।

    উত্তরমুছুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।