শুক্রবার, ২৭ আগস্ট, ২০১০

ব্লাডি ফেয়ার ডিংকুম ৬

বিমান যখন অস্ট্রেলিয়ার উপরে এলো তখন সময় যেনো ফুরোতেই চায় না। নিচে তাকিয়ে দেখি শুধু লাল আর লাল, যে দিকে চোখ যায় শুধু মৃতপ্রায় শুকনো খটখটে তেপান্তর। ৩৬ হাজার ফিট উপর থেকে সবকিছু প্রচন্ড একঘেয়ে  লাগছিলো, ঘন্টার পর ঘন্টা শুধু সেই একই দৃশ্য। আয়ার্স রকের কাছে আসতেই পাইলট বিমান ১৫ হাজার ফিট নিচে নামিয়ে বললো এই সেই বিখ্যাত আয়ার্স রকের । উপর থেকে দেখা হয়েছে এখনো নিচ থেকে দেখা হলো না। এ জনমে কত কিছু যে দেখবার বাকি রয়ে গেলো।

বিমান যখন সিডনীর আকাশে সূয্যি মামা তখন ঘুমুতে যাবায় ব্যস্ত। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টেরই পাইনি। ঘুম যখন ভাঙলো তখন তাকিয়ে দেখি পাশের সেই সুইস কাপল বিমানে কেনা কাটা করছেন। ক্যাটলগে দাম দেখে মনে হচ্ছিলো এত্ত দাম দিয়ে কেনার মানে হয় ! চারপাশে সবাই তখন নামার প্রস্তুতিতে হালকা ব্যস্ত।

সিংগাপুর এয়ারের সার্ভিস সেইরকম বলার মতো। ১০০ তে ১০০। একটি কেবিন ক্রুর কথা মনে আছে। পুরো সময়টুকুতে একই রকম সার্ভিস দিয়ে গেলো অক্লান্ত ভাবে। মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করলে মেয়েটার চেহারা আবছা আবছা মনে পড়ে। কি নিস্পাপ হাসি হাসি মুখ। 'গুড অন ইয়া সিস'

বিমান সিডনীর মাটি ছোঁবার মনে হলো এসেই গেলাম শেষ মেশ ! 


একটু হাঁটতেই প্রথমেই ইমিগ্রেশন। কোনো কিছু না বলেই হাসি মুখে সিল মেরে মধ্যবয়স্ক অফিসার যখন বল্লেন " ওয়েলকাম টু ডাউন আন্ডার"। বাহ এত দ্রুত সবকিছু হয়ে গেলো। নসিড়ি বেয়ে নিচে নেমে লাগেজের জন্য অপেক্ষা করছি। বিশাল বিশাল নান রঙের হড়েক আকারের সব লাগেজের মাঝে কোনটা যে আমার বুঝে উঠতে পারছিলাম না। হঠাৎ নীল শার্ট পড়া এক অফিসার, সাথে কুকুর নিয়ে আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে আমার পাসপোর্ট দেখতে চেয়ে জিগেস করলেন কোথায় যাচ্ছি। আমি উত্তর দেবার পর কুকুর দিয়ে আমার হ্যান্ড ব্যাগ চেক করতেই পেয়ে গেলো সিংগাপুরে খাবারের জন্য দেয়া মাংসের কাবাব। সিংগাপুরের তাড়াহুড়োয় কাবাবের কথা মনেই ছিলো না। পেটের বদলে কাবাবের স্থান হলো রাবিশ বিন। এর পর সেই নীল শার্ট পড়া কাস্টমস অফিসার তার সাথে আসতে বল্লেন। পাশে তাকিয়ে দেখই দাড়ি -টুপি পড়া একদল এরাবকে পাশের রুমে নেয়া হচ্ছে। আমি ভাবলাম  আমাকে বুঝি গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কি ঝামেলাই না অপেক্ষা করছে ভাগ্যে।
---------

স্মৃতিচারণ মাঝে মাঝেই খাপছাড়া লাগতে পারে। পরের ঘটনা আগে, আগের ঘটনা পড়ে চলে আসতেই পারে। স্মৃতি মাঝে মাঝেই বড্ড প্রতারন করে। এক সংগে আসতে চায় না।

1 টি মন্তব্য :

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।