শনিবার, ৮ মে, ২০১০

আমার বোনটা ভালোই আছে, আপনার বোনটি ভালো আছে তো?

পয়লা বৈশাখের " গ্যান্জামের " খবর শুনেই সাথে সাথে ছোট বোনটাকে ফোন করে যখন শুনেছি ও ভালোই আছে তখন অন্য রকম শান্তি লেগেছিলো। ছোট বোনটি অবশ্য তখনো জানতো না কি ঘটেছিলো সেই "গ্যান্জামে"। বড় ভাই হয়ে ওকে বলতেও পারি নাই কি হয়েছিলো সেই কনসার্টে। পরে হয়তো ও জেনেছিলো। আমার ভীতু বোনটি এতসব জানবার পর আর কোনোদিন পয়লা বৈশাখের উৎসবে যাবে কি না সেটা নিয়ে বেশ সন্দেহ আছে আমার।

পরের দিন পত্রিকা বের হয়নি। যেদিন পত্রিকা বের হলো সেদিন যত গুলো পত্রিকা পড়া সম্ভব সবগুলোতেই খুঁজে খুঁজে বের করার চেস্টা করেছি আসলেই কি হয়েছিলো সেই (দূ)ঘটনায়। একদল পূরুষ দল বেঁধে এক নারীকে ঘীরে মেতে উঠেছিলো উদ্দাম পাশবিকতায়। একে একে ছিড়ে খুঁড়ে খেতে চেয়েছিলো নারী দেহ। আমরা তথাকথিত ভদ্রলোকেরা যাকে বলি " লাঞ্ছিত "  করা। সংখ্যার বিচারে তা হয়তো শত ছড়ায়নি বা ছাড়িয়েছে। পরের কিছু দিন সবগুলো পত্রিকা শুধুই ঘেঁটেছি এর প্রতিক্রিয়ায় কি হলো তা জানতে। পুলিশ বলেছে ' যেহেতু তারা অভিযোগ পায়নি সেহেতু তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি'। তারা শুনেছে এরকম কিছু একটা ঘটেছে, তবে তা তেমন গুরুতর কিছু ছিলো না! '। স্বীকার করি আর নাই করি;  পুলিশের হাত বাঁধা, চোখ বাঁধা । তারা অনেক সময় তারা দেখেও না দেখার ভান করে, শুনেও না শোনার ভান করে করে। অনেক কিছু করতে চাইলে করতে চাইলে করতে পারে না, অনেক সময় করবার গরজও দেখায় না। 



 ভেবেছিলাম প্রধানমন্ত্রি - স্বরাস্ট্র - পররারস্ট্র- কৃষি - সংসদ উপনেতা  যখন একজন নারী তখন কিছু একটা হবে, যেখানে অপরাধিদের রাজনৈতিক পরিচয় বের করা সম্ভব হয়েছিলো। তারা ছিলো তাদেররই বংশবদ ছাত্র লীগের কর্মী। কিছুই করা হয়নি এদের বিরুদ্ধে। একজনকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। দলীয়ভাবে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। যেনো আদৌ কিছু ঘটেনি ! সবকিছু বেমালুম চেপে যাওয়া হচ্ছে। নারীবাদিরাও চুপ। যেনো এ সবকিছুই খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।

যে মেয়েগুলো " লাঞ্ছিত " হয়েছিলো তারা কোনোদিনই প্রকাশ্যে কিছু বলবে না। অভিযোগ করতে আসবে না পুলিশের কাছে। একবার "লাঞ্ছিত" হবার পর বার বার "লাঞ্ছিত" হতে তারা চায় না আদালতে । এ সমাজ সাহসী মেয়েদের "খারাপ" মেয়ে বলে। কোনো সাহসে তারা মুখ ফুটে প্রতিবাদ করেবে ? কার কাছে? যে সমাজের প্রত্যেক পুরুষের মাঝেই লুকিয়ে আছে একেকটি ধর্ষকামী পশু।
গত ফেব্রুয়ারী মাসেও এরকম এক ঘটনা ঘটেছিলো ময়মনসিংহের এক কনসার্টে। রিপোর্ট টির শীরোনাম ছিলো "আনন্দমোহন কলেজের উৎসবে দুঃসহ ঘটনা, সবাই নীরব" । এটাও যথারীতি চেপে যাওয়া হয়েছিলো যেনো খুবই সাধারন এক ব্যপার সেগুলো। আমরা এসব ঘটনা চেপে যেতেই ভালোবাসী।

একবার ভাবুনতো, যে মেয়েটি " লাঞ্ছিত " হলো সেই মেয়েটি আপনার বোন বা আমারই ছোট্ট বোন। এবার বাস্তবে ফীরে আসুন, নাহ কিছুই হয়নি বোনটির। ভালো আছে ও। কিন্তু যে মেয়েটি " লাঞ্ছিত " হলো সে মেয়েটিও কিন্তু কারো আদরের ছোট্ট বোন, কারো প্রেমিকা, কারো স্ত্রী , কারো মা , কারো সন্তান।

আমার বোনটা ভালোই আছে, আপনার বোনটি ভালো আছে তো?

শেষ করছি রবির লেখা পোস্টের শেষ অংশগুলো দিয়ে 

আপুমনিরা আপনাদেরকে একটা টিপস দিচ্ছি । এই ঘটনার ব্যাপারে ব্যবস্থা যে নেয়াই দরকার এটা কীভাবে আপনারা উপলব্ধি করবেন। কল্পনা করুন , পয়লা বৈশাখে একটি মেয়ে ক্যাম্পাসে এসেছে উৎসব উদযাপন করতে। হঠাৎ একদল ছেলে হাজার মানুষের সামনে তাকে নগ্ন করে ফেলল। মেয়েটির অসহায় চেহারার দিকে তাকান। দেখুন মেয়েটাকে আপনার নিজের মেয়ের মতো লাগছে কিনা ? আপারা একবার চোখ বন্ধ করে দেখার চেষ্টা করুন তো ! ক্লোজ ইয়োর আইজ , এন্ড ট্রাই টু সি।

রবির এ পোস্ট পড়বার পড়ই কিছু লেখার ইচ্ছে হলো। এজন্য এ লেখার কৃতিত্ব একান্তই রবির।

ছবি সত্বঃ প্রথম আলো


কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।