বুধবার, ১৭ মার্চ, ২০১০

টানা পোড়ন

বিদেশে দেশী ভাইদের আড্ডায় এহেন কোনো বিষয় নেই যা নিয়ে আলোচনা হয় না। বাড়ীর ছাদের টালি কিভাবে সস্তায় ঠিক করতে হয় সেটা থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রি কেভিন রাডের মাথার চুল কেনো দিনকে দিন সাদা হয়ে যাচ্ছে জাতীয় কথা আলোচনায় চলে আসে। তবে দিনের শেষে আড্ডায় " "রাজনীতি" নিয়ে কথা আসবেই আসবে এবং তা বাংলাদেশের রাজনীতি। কথায় কথায় দেখা যাবে কেউবা আম্লীগ, কেউ বা বিম্পি। মাঝ খান থেকে 'কি দরকার বিভেদের রাজনীতি করবার ! আসুন সবাই অতীত ভুলে মিল মিশে দেশ গড়বার ঈমানী দ্বায়িত্ব পালন করি' জাতীয় ছুপা জামাতির বয়ানও শোনা যায়। ব্যক্তিগত ভাবে রাজনীতি চরম পছন্দের বিষয় হলেও বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ভাব্বার রুচি , সময় বা আগ্রহ কোনোটাই আমার এখন আর হয় না।

সেদিন এরকম এক আড্ডায় বসেছিলাম। বরাবরের মতো আজকাল শ্রোতার চাইতে বক্তার সংখ্যাই বেশী। সেদিনও সেটার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সবাই যে যার মতো বলে যাচ্ছে। কে শুনছে আর কে শুনছে না সেটা নিয়ে বোধোহয় কারো তেমন মাধা ব্যথা ছিলো না। চরম বিরক্তি নিয়ে সবকিছু শুনতে হচ্ছিলো। আড্ডায় বসে বিরিয়ানী রাঁধার সুঘ্রান পাচ্ছিলাম, নচেৎ আড্ডা থেকে উঠেই আসতাম।

আড্ডায় আমরা যারা ছিলাম তাদের বেশীর ভাগই পড়াশোনা করতে এসে এদেশে থেকে যাওয়া, কিছু দেশ থেকে স্থায়ী অভিবাসন নিয়ে আসা। দু একজন ছিলেন যারা এখনো পড়ছেন, তারা এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না কি করবেন; থাকবেন - না দেশে ফেরৎ যাবেন।

দেশে থাকার পরিবেশ নাই, দেশ আমাকে কি দিয়েছে, দেশে ভালো বেতন পাওয়া যায় না, দূর্নীতি পদে পদে, কথায় কথায় হরতাল, জীবনের নিরাপত্তা নাই, রাস্তায় জ্যাম, ইলেকট্রিক তার থেকে কখন কাকের ইয়ে এসে পরে, বাতাসে ধোঁয়া, হাজার হাজার মানুষ ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক অভিযোগের ফুলঝুড়ি। এসব অভিযোগের বাস্তবতা আছে। তবে বিদেশে নিরাপদ পরিবেশে থাকতে থাকতে আমরা এই মানুষগুলো কেমন যেনো চিড়িয়াখানায় লালিত পালিত বাঘের মতো হয়ে গিয়েছি, যে বাঘটি বুনো পরিবেশে বাস্তব জীবনে নিজ হাতে শিকার করে খেতে অক্ষম। দেশের কঠিন বাস্তবতা থেকে দূরে সরে থাকতে বিদেশের তথাকথিত নিরাপদ পরিবেশই আমাদের কাছে বেশী আবেদন রাখে।

দিন রাত যন্ত্রের মতো কাজ করে, ক্ষুদ্র গন্ডীবদ্ধ সামাজিক পরিবেশে বাস করে, বাড়ীর মর্টগেজ - কার লোন - ক্রেডিট কার্ডের লোন- বিচিত্র রকম বিল শোধ করে রাতে ঘুমুতে যাবার আগে হয়তো কি পেলাম বা কি পেয়েছি জাতীয় কথা অনেকের মাথায় হয়তো চলে আসে, তবে পরের দিন আবারো সেই জীবনের লুপে পরে সেসব গল্প হয়ে যায়।

একটা লাল -নীল পাসপোর্টে বিদেশে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে, চকচকে ঝকঝকে শপিং মলে বাজার সদাই করে , সন্তানদের তুলনামূলক ভাবে ভালো স্কুলে পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দেয়া , ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা পাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি কারনে দেশের প্রতি টান এক সময় ফীকে হয়ে আসে, কিন্তু মমতা রয়ে যায়, রয়ে যায় ভালোবাসা। এই ভালোবাসা মমতার টানেই হয়তো বছর ঘুরে আমরা দেশে বেড়াতে যাই। সাথে নিয়ে যাই কে মার্ট - বিগডাব্লু বা চাইনিজ দোকান থেকে সস্তা কিছু গিফট। এই মমতা থেকেই দেশে পিতা মাতার কাছে টাকা পাঠাই। কিন্তু দেশে ফেরত যাবার কথা ভাবী না। দেশ কি দিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলি কিন্তু দেশকে আমি কি দিয়েছি সে প্রশ্ন সযতনে এড়িয়ে যাই। দেশে টাকা পাঠিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলি কিন্তু দেশে বিনিয়োগ করবার সাহস দেখাই না। দেশে ফেরত না গিয়ে দেশ উদ্ধার করি বিদেশের আরামের ড্রইং রুমের আড্ডা খানায়।

লক্ষ্য করে দেখেছি এই সব পাশ কাটানো সব কাজগুলোই করেন উন্নত দেশগুলোতে অভিবাস নেয়া উচ্চ শিক্ষিত মানুষগুলো। অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষিত বা স্থায়ী ভাবে থেকে যাওয়ার সুযোগ নেই এরকম মানুষগুলো যখন দেশে ফেরৎ যান , তখন কিছু না কিছু করার চেস্টা করেন বিদেশ হতে হাড়ভাঙা কস্টের উপার্জন দিয়ে কিছু করবার। কেউ ছোট্ট দোকান দেন, কেউবা ছোট্ট কারখানা খুলে কিছু করবার চেস্টা করেন। আর আমরা যারা পড়াশোনা শিখে নিজেদের অভিজাত ভাবছি তারা বড়জোর দেশে একটা দামী এপার্টম্যান্ট কিনি ! দেশে রেমিট্যান্স এর বেশীর ভাগ এসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে, তথাকথিত উন্নত দেশে বাস করা তথাকথিত উচ্চ শিক্ষিত মানুষগুলোর কাছ থেকে নয়।

দেশ থেকে তো অনেক কিছু পেয়েছি, দেশকে আমি কি দিলাম ?

Amazon Kindle Black Leather Cover w/ strap (Fits 6" Display, Latest Generation Kindle) Need You Now

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।