সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০০৯

এই ঠান্ডা এই গরম

1 টি মন্তব্য :
ক্যানবেরায় এখন গ্রীস্মকাল। দু সপ্তাহ আগে কাঠ ফাটা প্রচন্ড গরমে মনে হচ্ছিলো শীতকালই ভালো ছিলো। সেই ক্যানবেরায় এখন শীতকুমারের ষড়যন্ত্রে কনকনে ঠান্ডা, সাথে দমকা বাতাস। হালকা বৃস্টিও হয়েছিলো আজ। এ মুহুর্তে তাপমাত্রা ১০.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস, মধ্যরাতে তা ৬-৭ এ নামবে। দুদিন আগে প্রচন্ড গরমে মনে হচ্ছিলো এসি কাজ করছে না, এখন মনে হচ্ছে হিটার কাজ করছে না। এখানকার আব হাওয়ার মতিগতি নারী মনের মতোই রহস্যময়ী, বোঝা দায়।

ক্যানবেরার মাছিগুলোকে মিস করছি। ধুমসো আকৃতির কালো কালো বিশালাকৃতির সব মাছি। বাতাসে সব মাছি মনে হয় অন্য কোথায় হিজরত করেছে।

বেশ অলস একটি দিন কেটে গেলো। তেমন কিছু করার ছিলো না। বছরের শেষের দিনগুলো কেমন জানি আলসেভাবেই কেটে যায়, সম্ভবত নতুন বছরের ব্যস্ততার প্রস্তুতি নিতে সামান্য অবসর দেন আল্লাহ তায়ালা।


ক্রিসমাস আসছে সেটা বাজারে গেলে বোঝা যায়। বাজারের সেল্ফে সেল্ফে ক্রিসমাস ঝলমল করছে।দেশে থাকতে দেখতাম ঈদ - পূজার সময়গুলোতে জিনিস পত্রের দাম বেড়ে যায়, এখানে তার উল্টো। সব কিছুর দাম যেনো পাল্লা দিয়ে কমতে থাকে। মানুষের পকেটের শেষ সেন্ট টুকু রেখে দেবার সেকি আপ্রান চেস্টা দোকানদারদের।

আজ আবারো সাদা পোলাও রেঁধেছি। রাঁধতে রাঁধতে মনে হয় পাকা রাঁধুনিই হয়ে যাবো। কে জানে ! সাথে ছিলো মুরগীর মাংস ও টমাটো সালাদ। কাল সুনিল দার বাসায় দাওয়াত। সন্ধ‌্যে বেলায়। বরাবরের মতোই আকন্ঠ খাওয়া হবে। ওজন নিয়ে চিন্তায় পড়ে যাচ্ছি। স্টুপিড গ্র্যাভেটি :-)

দিব্যর বয়স দেখতে দেখতে প্রায় দেড় বছর হতে চল্লো। সময় যে কি দ্রুত কেটে যায় বোঝাই যায় না। এইতো সেদিন বিয়ে করলাম, এখন ছেলে বড় হয়ে যাচ্ছে। কদিন বাদে দেখা যাবে ছেলের বিয়ের কথা ভাবতে হচ্ছে !

রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০০৯

ঈদ উল আজহা উর্ফে বকরির ঈদ উর্ফে বকরা ঈদ কেমন কাটিলো !

কোন মন্তব্য নেই :


বৈদেশে ঈদ কেমন হইয়া ‌থাকে তাহা নিয়া সদ্য প্রাচীনকালে শত শত দিস্তা কাগজ খরচ হইয়া থাকিলেও আজকালকার পৃথিবীতে সেই শত শত দিস্তার কাগজের বদলে শত শত আন্তর্জালিক পাতা ভড়িয়া উঠে ঈদ লইয়া। মানুষের কস্ট, সুখ, আনন্দ - হাসি কান্নায় ভড়া ঈদের গল্প পড়িয়া চিত্ত কখনো প্রফুল্ল হইয়া উঠে, কখনোবা কস্ট ভাড়াক্রান্ত হইয়া উঠে। কেউবা ঘুমাইয়া ঈদ পালন করেন, কেউবা ঘুড়িয়া বেড়াইয়া। নাতিদীর্ঘ প্রবাস জীবনে কত ঈদ পার করিয়াছি সেটা নিয়ে অনেক গল্প জমিয়া আছে। সময় করিয়া কোনো একদিন সেটা বলা যাইবে।

কেনো জানি ইশ্বর ঈদের সময় আমাকে অভাবগ্রস্থ করিয়া ফেলেন। বছরের অন্য সময়গুলোতে অর্থ সংকটে না থাকিলেও বিধাতার ক্রীপায় কেনো জানি এবারো অর্থ সংকটে পড়িয়া গেলাম ( শেষ খবরঃ সামলাইয়া উঠিয়াছি)। ঈদের নামাজের সময়টুকু ঘুমাইয়া পার করিয়াছি। মধ্যাহ্ন ভোজন সাড়িয়া স্ত্রী-পুত্র সহকারে একটি দূরদর্শন যন্ত্র কিনিবার উদ্দেশ্যে বাজারে গমন করিলাম। অনেক বাছিয়া - অনেক যাচাই করিয়া একটি বৃহৎ চকচকে এলসিডি দূরদর্শন যন্ত্র কিনিয়া গৃহে প্রত্যাবর্তন করিয়া সদ্য কেনা যন্ত্রের ছবি দেখিয়া মুগ্ধ দৃস্টিতে তাকাইয়া মনে করিলাম ইহাই আমার ঈদ।

ডাউনআন্ডারের রাজধানী ক্যানবেরায় অল্প কিছু বঙ্গদেশীয় সন্তানের বসবাস। সংখ্যায় তাহারা খুব কম না হইলেও অন্যান্য শহরের তুলনায় অল্পই বলা যাইবে। চেস্টা করিলে একে অপরের হেঁসেলের খবরও জানা যায় এরকমটি ক্ষুদ্র সমাজে প্রতি ঈদে খোলা বাড়ী (ওপেন হাউজ) করা হইয়া থাকে। এবারে সেটা হইয়া উঠেনি কিছু অভদ্র বঙ্গসন্তানের ষড়যন্ত্রে। ইহারা দেশ বদল করিয়াছে স্বভাব বদল করিতে পারে নাই। উহারা ইর্ষান্বিত বোধ করিয়া - নিজের নাক কাটিয়া হইলেও অন্যের যাত্রা ভংগ করিবার শিশুসুলভ আচরনে এটা না করিতে দিয়ে নিজেদের মনের ক্ষুদ্রদিকটি আবারো উন্মোচন করিলো। হতাশ হইয়াছি ইহাদের আচরনে।

আজ মধ্যাহ্নভোজনে নিমন্ত্রন ছিলো এক ভদ্র পরিবারে। স্বগৃহ হইতে বাহির হইবার সময় আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখিয়া আতংকিত বোধ করি নাই, ক্যানবেরার আকাশে এরকম শত কালো মেঘ দেখইলেও বৃস্টি দর্শন কদাচিৎ ঘটিয়া থাকে। উদ্দিস্টে যখন পৌঁছিয়াছিলাম তখন প্রায় বৃস্টিতে ভিজিবার উপক্রম। খাদ্য উপাদেয় হয় নাই। ছোট মাছের চচ্চরি, শুটকি, লাউ সহকারে চিঙড়ি, সব্জি ভাজি, গো মাংস, কুক্কুট তরকারী ভক্ষন করিয়া অতৃপ্ত মনে এটাই ভাবিতেছিলাম গৃহস্বামী কথার সাথে সাথে রন্ধনেও পারদর্শী হইলে খাদ্য আরো উপাদেয় হইতো। তবে আন্তরিকতায় ঘাটতি ছিলো না একদমই। ইহা ভালো লাগিয়াছে।
আসিবার পথে স্ত্রীর এক সহপাঠীর গৃহে গমন করিলাম। কিছু সময় কাটাইয়া যখন স্বগৃহে ফেরত আসিলাম তখন সূর্যদেবতা অস্তগামী।

এবারের ঈদে দেশে পিতা মাতার কাছে অর্থ প্রেরণ করিয়াছি, নতুন দূরদর্শন যন্ত্র কিনিয়াছি, স্ত্রী পুত্র সহকারে ঈদ করিয়াছি, স্ব হস্তে বিরিয়ানী রাঁধিয়াছি, দূর হতে স্বজনদের সংক্ষিপ্ত বার্তা পাইয়াছি, নিরাপদে শান্তিতে দিনযাপন করিতে পারিয়াছি -- এইতো আমাদের ঈদ। বাকিসকল তুচ্ছ হইয়া যায় শিশু পুত্রের হাসির কাছে।


কার্টুন সত্বঃ সুজন চৌধুরী

বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০০৯

বিড়ম্বনা

1 টি মন্তব্য :

পকেটে ছিলো $৭৫। বাজার শেষ করে যখন চেক আউটে এসেচি তকনো আন্দাজ করতে পারিনি কি অপেক্ষা করচে ভাগ্যে। জিনিস পত্র স্ক্যান করা হচ্চে, মনিটরে দাম উঠচে, উঠতে উঠতে এক সময় দেখি তা $১০২.০৭ এ ঠেকেচে।
চেক আউটের ছোকড়া কে বল্লুম " বাপু, পকেটেতো একুনে ৭৫ ডলার রয়েচে, ১০২।০৭ তো নেই। কি করা যায় বলতো " । ছোকড়া ফোন তুলে কাকে জানি ডাকলো। তাকিয়ে দেখি সে এক ঝাঁকরা চুলের ছোকড়া। সে বল্লো কিছু জিনিস বাদ দেবার চেস্টা করুন।
যেই কতা, সেই কাজ। আমিও বাচতে শুরু করলুম কি কি বাদ দেয়া যায়। গিন্নিকেও বল্লুম হাত লাগাতে। প্রথমেই মুরগী, তার পর ১ লিটার দুধের বোতল। এভাবে বাদ দিতে দিতে একসময় যখন তা ৭৫ ডলারে নাবলো তখন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলুম। কি এক বিড়ম্বনা। দুগ্গা দুগ্গা........এজন্যই গুরুজি বলেন 'বাজার একোরডিং টু ইয়োর পকেট'।

বেশ ঠান্ডা পরেচে ক্যানবেরায় (এটা কিন্তু মজা করে বলচি না বাপু, সত্য সত্যই বলচি ) গত কদিন যা বেশ গরমটি ছিলো। ৪০ ছুঁলো বলে ! যে হারে কাপড় খোলা শুরু হয়েছিলো তাতেতো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলুম। ধম্ম কম্ম বাদ দিয়ে বুঝি বিশ্বকর্মার স্মৃস্টির পুজোয় নাবতে হবে।

একানে আগামী ২৭ তারিখ কোরবানী ঈদ। কোরবানী দোবো না, হবোও না। এ দেশে পশু কোরবানী দিয়ে গোশত খাওয়া ছাড়া কাজের কাজ কিচুই হয় না। ভেতরের পশুটাকে কোরবানী না দিয়ে বাহিরে পশুটাকে মেরে কি ছুক?

সবাইকে ঈদ মোবারক

শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০০৯

একাত্তরের যুদ্ধাপোরাধীদের বিচার কাজ শুরু করতে সরকার কতটুকু প্রস্তুত ?

1 টি মন্তব্য :
একাত্তরের যুদ্ধাপোরাধীদের বিচারে আওয়ামী লিগ সরকারের আন্তরিকতা আছে কি না সেইটা নিয়া প্রশ্ন না তুলেই মনে প্রশ্ন জাগছে, "সরকার আসলে কতটুকু প্রস্তুত বিচার কাজ শুরু করতে"।

ব্লগে রুবেলের এক পোস্টে দেখলাম গোল টেবিল বৈঠকে সবাইকে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবারো নজাগরন ও সচেতনতা স্মৃস্টি করতে আহবান জানিয়েছেন। মানুষের মধ্যে সচেতনতা ঠিকই আছে, আছে বিচার চাইবার আখুতি, আছে ঐকান্তিক জাগরন। কিন্তু কথা হচ্ছে আর কতটুকু জাগরন স্মৃস্টি হলে হলে সরকারের বাস্তব কিছু করার প্রেরণা জাগবে?

রুবেল - অরন্যরা সব কিছু ফেলে ফুলে পাগলের মতো মানুষের স্বাক্ষর জোগার করবে আর সেই স্বাক্ষরগুলো গুদামঘরে পঁচে মরবে সেটাতো হতে পারে না। সাধারন মানুষের মাঝে জাগরন ঠিকই আছে , সবই ঠিক ; আছে । এখন দরকার সরকারের কাজ শুরু করবার পালা, বিচার কাজ শুরু করবার পালা। এটা না করে হাজারো সুশীল গোল টেবিল করলে কাজের কাজ কিছুই হবে না।

কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে ইচ্ছে করে।

১) বিচারে কাজে কারা কারা অভিযুক্ত হবে ?
হাতে গোনা - মুখ পরিচিত কিছু গোআ- নিজামী জাতীয় জামাতি নেতা না একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপোরাধী সকল রাজনৈতিক নেতা- কর্মী ?
মুখ চেনা কিছু পরিচিত পশুর বিচার হলে সেটা মুলত আই ওয়াশই হবে, পরিপূর্ন বিচার হবে না।
২) রাজনৈতিক অভিযুক্ত ছাড়াও যারা শান্তি কমিটিতে ছিলো বা কোলাবেরটর হিসেবে কাজ করেছিলো তারাও কি বিচারের সম্মুখিন হবে ?
৩) পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর যুদ্ধাপোরাধীদেরও কি বিচারের সম্মুখিন করা হবে ?
৪) রাজাকার বাহিনীতে কাজ করা রাজাকার ও ইপকাফ এর সদস্য অবাঙালীরাও কি বিচারের সম্মুখিন হবে ?
এ ব্যাপরে সরকারের কোনো সুনির্দিস্ট ঘোষনা আছে কি ?

যাই হোক, ধরা যাক জাগরন স্মৃস্টি হলো। তার পর সরকারকে কিন্তু অনেক কাজ করতে হবে। আনুস্ঠানিক ভাবে অভিযোগ আনতে হবে, সেটার তদন্ত করতে হবে। তদন্ত শেষে পুলিশের অভিযোগপত্র জমা দেয়ার পরই বিচার কাজ শুরু হবে। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ন মামলা বলে এটায় এমনভাবে তদন্ত করতে হবে ও অভিযোগপত্র দিতে হয় যাতে আদালতে গিয়ে কোনো ফাঁক ফোকরেই যুদ্ধাপোরাধীরা ছাড় না পায়। অনেকে হয়তো বলবেন, তথ্য- উপাত্ত- প্রমান অনেক আছে। মানছি আছে; কিন্তু আবেগের কাছে যা প্রমান সেটা আদালতের কাছে অনেক সময়ই প্রমান হিসেবে গন্য না। আবেগ ও আদালত দু ভাবে চলে।

এসময় আরেকটি আরেকটি প্রশ্ন জাগছে মনে।

৫) বিচারের জন্য স্পেশাল ট্রাইবুনাল করা হবে নাকি সাধারন আদালতেই বিচার কাজ শুরু হবে?

যে আদালতেই করা হোক না কেনো আদালতের বিচারে অনেক সময় লেগে যায়। আদালতে যে রায়ই হোক না কেনো সেটায় উচ্চ আদালতে আপিল করা যায়। সব কিছু মিলে অনেক সময় লেগে যায় বাংলাদেশের বর্তমান বিচার ব্যবস্থায়। এটা একটা বড় আশংকার বিষয় আমার কাছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া এসময় উদাহরন হিসবে আসতে পারে ।

এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ন কাজে সরকারের বলার মতো কোনো প্রস্তুতি চোখে পড়ছে না। গোল টেবিল বৈঠকে বা সেমিনারে সাদা কালো বাল ফেলানো ছাড়া কোনো কাজের কাজ হয় না।

আরেকটি কথা হলো,
তদন্ত ও তথ্য সংগ্রহের জন্য এমনটি কি কোনো সেল গঠন করা হয়েছে যারা এটা নিয়ে কাজ শুরু করেছে?
আইনজীবিদের নিয়ে কি কোনো বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে যারা আইনগত বিষয় নিয়ে কাজ করছেন ?

বর্তমান আওয়ামী সরকারের মেয়াদ থেকে ১ বছর চলে গেলো প্রায়। হাতে আছে ৪ বছর। এই ৪ বছরের শেষ ১ বছর যাবে পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতিতে। থাকলো মোটে ৩ বছর। ৩ বছর কিন্তু খুব অল্প সময় এরকম একটি বিশাল কাজের জন্য।

কথা অনেক হয়েছে, অনেক প্রতিশ্রুতিও অনেক শোনা হয়েছে। এখন কিছু করবার পালা। এবার না হলে এই জীবনে আর হবে না যুদ্ধাপোরাধীদের বিচার কাজ।