শনিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০০৯

"শহীদ" কিভাবে হওয়া যায় সেটা নিয়া ভাবছি

1 টি মন্তব্য :
যে রিকশাচালক গুলিতে মারা গেলো সে শহীদ না,
যে বিডিআর সুবেদার গুলিতে মারা গেলো সে শহীদ না,
যে ছাত্রটি ওষুধ কিনতে গিয়ে গুলিতে মারা গেলো সেও শহীদ না।

এদের "রাস্ট্রীয়" মর্যাদায় দাফন হবে না,
জাতীয় পাতাকায় মুড়িয়েও দেয়া হবে না কফিনটি।

এদের ছেলেমেয়েরা আজীবন সরকারী খরচে পড়াশোনা করার সুযোগ পাবে না,
৫ লাখ টাকা করে টাকাও জুটবে না তাদের ভাগ্যে,
বাকিদের কথা উহ্যই থাকুক।

নমঃশুদ্রদের ভাগ্যে এরকমটিই হয়,
এদের নিয়ে কোনো শোক গাঁথাও লেখা হবে না,
হবে না কোনো কলাম লেখা।

এরা আমজনতা; "শহীদ" হবার যোগ্যতা এদের নেই।

মঙ্গলবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০০৯

এটাই নাকি সুবিচার ?

1 টি মন্তব্য :

আদালতের বিরুদ্ধে কথা বল্লে নাকি আদালতের অবমাননা হয় ! হায়রে আদালত, যার চোখ বন্ধ, বিবেকও আজ বন্ধ।
"Justice delayed is justice denied " হুহ । যাও বিচার হলো তারও এই পরিনাম ! এটাও নাকি বিচার !!
সরকারি উকিলের উদাসিনতা ! তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়সারা তদন্ত ! স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য দিতে গরিমসি !
শালা সব শুওরের পাল।

এ দুনিয়ায় গরিবের বিচার চাওয়াটাই আজ পাপ। গরিবের আল্লাহ ছাড়া কেউ নাই। আল্লাহও আজ চোখ ফিরিয়ে অন্য কিছুতে ব্যস্ত।

-------------------------
রাহেলা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি লিটনের মৃত্যুদন্ড( প্রথম আলো , ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০০৯)
সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদক
তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক রাহেলা আক্তার লিমাকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে একজনকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোস্তফা দেওয়ান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে তিন আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
মৃত্যুদন্ড পাওয়া আসামি হচ্ছে সাভার থানার রেডিও কলোনির আবদুল ওয়াদুদের ছেলে মো. লিটন। আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। লিটন পলাতক। সে গ্রেপ্তার হওয়ার পর অথবা আদালতে আত্মসমর্পণের পর এ রায় কার্যকর হবে।
খালাস পাওয়া আসামিরা হলো মো. কবির, দেলোয়ার ও ফজলুল হক ওরফে ফজর আলী ওরফে ফজা। তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জঙ্গল থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় রাহেলাকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের ২৩ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। মৃত্যুর আগে সে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে মৃত্যুকালীন জবানবন্দি দেয়।
জবানবন্দিতে রাহেলা বলে, ২০০৪ সালের ২৯ আগস্ট হরতালের দিন রাহেলা তার এক বান্ধবীকে নিয়ে সাভার সেনানিবাসের চিড়িয়াখানা দেখতে যায়। দুপুরে চিড়িয়াখানা দেখা শেষে তার বান্ধবী নিজের বাড়িতে চলে যায়। রাহেলাও হেঁটে নিজের বাড়িতে ফিরছিল। পথে পূর্বপরিচিত লিটনের সঙ্গে দেখা হলে লিটনও সঙ্গে সঙ্গে যায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের কাছে এলে লিটন জোর করে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশের জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে লিটন রাহেলাকে ধর্ষণের পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার গলায় কোপ মেরে ফেলে রেখে চলে যায়। লিটন পরে আবার এসে রাহেলার গলার স্বর্ণের চেইন ও নাকফুল নিয়ে যায়। তিন দিন রাহেলা পড়ে থাকে সেখানে। তার চিৎকার কেউ শুনতে পায়নি। ১ সেপ্টেম্বর সকালে লিটন ও তার সহযোগীরা এসে রাহেলার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। পরে রাহেলার চিৎকার শুনতে পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি হওয়ার ২৩ দিন পর রাহেলা মারা যায়।
বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (স্পেশাল পিপি) অ্যাডভোকেট আবদুল কাইয়ুম রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে লিটনের সহযোগী যারা রাহেলার মৃত্যু নিশ্চিত করতে গাঁয়ে আগুন দিয়েছিল, তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

যুদ্ধে যারা গর্তের অধিবাসী, যুদ্ধের শেষে তাহারাই সোচ্চার

কোন মন্তব্য নেই :

জীবনের একটা সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অন্যরকম এক ধারনা কাজ করতো। হয়তো ছবিতে রাইফেল হাতে দীপ্ত যোদ্ধাদের দেখেই এমনটি হয়েছিলো। প্রথম যখন সামনা সামনি একজন মুক্তিযোদ্ধাকে দেখেছিলাম তখন প্রচন্ড অবাক হয়েছিলাম। জীর্ন শীর্ন এক লোক, নোংরা মলিন লুঙি পড়া এক মধ্যবয়সী এক মানুষ। সামনে বসে যখন খাচ্ছিলেন তখন মনে হচ্ছিলো কত দিন যেনো না খেয়ে আছেন। সহায় সম্বলহীন সেই মানুষটি ছিলেন একজন বীর প্রতিক। শেষ সম্বল ভিটা মাটি বাঁচাতে বাবার কাছে এসেছিলেন। পুলিশ দিয়ে তাঁর ভিটে ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব হলেও পরে কি হয়েছিলো সেটা জানা হয়নি আর। তবে তার চেহারা এখনো চোখে ভাসে ' চোখগুলো যেনো জ্বল জ্বল করছে'।

এটিও অনেক বছর আগের কথা। ১৬ই ডিসেম্বরে ১৯৯*। ঢাকার আশে পাশে কোনো এক থানায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেয়া হবে। অনুস্ঠানটি দেখার দূর্ভাগ্য হয়েছিলো। সাজানো মন্চের মাঝ খানে বিশাল চেয়ারে প্রধান অতিথি হিসেবে ডি.সি, তার আশে পাশে মেঝো-সেজো আমলা। সবার বামে থানা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের কমান্ডার। সামনের সাড়িতে নরম সোফায় স্বস্ত্রীক আমলারা। আর যাদের জন্য অনুস্ঠান তাঁরা বসেছে পেছনের সারিতে, গাদা গাদি করে, কাঠের ফোল্ডিং চেয়ারে। বেশীর ভাগের পড়নেই লুঙি, হয়তো সবচাইতে ভালো লুঙি-জামা পড়েই তাঁরা এসেছিলেন। অনুস্ঠান শেষে অনেককেই ভ্যানে করে গাদাগাদি করে চলে যেতে দেখা যায়, পাশেই ধুলো উড়িয়ে ডিসির পাজেরো।

উপরের দুটো ঘটনা বলার মাজেজা হলো মুক্তিযোদ্ধাদের বর্তমান অবস্থা বোঝানো। যাদের সামনে থাকার কথা ছিলো তারা আজ পেছনে, যাদের সব কিছু পাবার কথা ছিলো তারাই আজ অবহেলিত। আজকের দিনে অনেককেই মুক্তিযু্দ্ধের স্মৃতিচারন করতে দেখি, যাদের বেশির ভাগকেই ৭১ এ অস্ত্রহাতে দেখা যায় নি। যুদ্ধের অভিগ্যতা বন্চিত এই মানুষগুলো বড় গলায় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন, মুক্তিযোদ্ধা ক্যটাগরিতে প্লট নেবার জন্য তোষামুদিও করেন। ৭১ এ মুক্তিযোদ্ধাদের বদনা এগিয়ে দেয়া লোকও আজ মুক্তিযোদ্ধা। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের যখন খবর নেবার সময়ও পাওয়া যায় না।


পত্রিকার পাতায় মাঝে মাঝেই গরীব মুক্তিযোদ্ধাদের খবর পড়ার দূর্ভাগ্য হয়, যথারীতি সে সব খবরের স্থান হয় মাঝের পাতায় কোনো এক কোনে। মফস্বল সংবাদদাতার পাঠানো সংবাদগুলো যে আজো পত্রিকার নিউজ এডিটরের নেক নজর পায় সেটাই অবাক করার মতো ঘটনা। অবশ্য এসব খবরের আনাগোনা চোখে পড়ে ডিসেম্বর বা মার্চ মাসেই। বছরের অন্যান্য সময়ে ব্যস্ত থাকা হয় অন্য সব কিছু নিয়ে।

আমরা এমনই এক অকৃতগ্য জাতি যারা তাদের বীর সন্তানদের প্রকৃত সম্মানটুকুই দিতে পারিনি, দেইনি। চেতনার কথা বলি কিন্তু চেতনার সৈনিকদের সযতনে পাশে সরিয়ে যুদ্ধের ইতিহাস লিখি। মাসে ৫০০ টাকা ভাতা দিয়ে বাহাব নেই, মারা যাবার পর রাস্ট্রীয় সম্মান দেই কিন্তু জীবদ্দশায় খবর নেই না।

জীবনের একটা সময় বোকার মতো আগ্রহ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পরে থাকা হতো। এখন অবশ্য সে সময় নেই। আর দশটা স্বার্থপর মানুষের মতই নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। মাজে সাজে মুক্তিযুদ্ধ- মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ঊঁ-আহ্‌ করে আত্নতুস্টিতে ভুগি আর কি। এটাও আজকালকার এক ধরনের ফ্যাশন। ফাক দিজ ফ্যাশন।

১৯৭১ - ২০০৯; ৩৮ টি বছর। ৭১ এর সদ্য গোঁফ ওঠা কিশোর মুক্তিযোদ্ধা আজ পক্ক কেশের এক মধ্যবয়সী পৌড়। হয়তো পরপারেও অনেকে। সম্মান দেয়া হলো না, তাদের প্রাপ্যটাও দেয়া হলো না। শালার বাঙালী জাতি।

"যুদ্ধে যারা গর্তের অধিবাসী, যুদ্ধের শেষে তাহারাই সোচ্চার" - আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর লেখা কোনো এক কবিতার দুটো লাইন অনেক কিছুই বলে দেয়। আর কিছু কি বলার আছে ?