বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০০৯

মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা আসলে কতো ??

খুব সম্ভবত বদরুদ্দিন উমরের একটা লেখা পড়েছিলাম। উনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন " দেশে সৈনিকের সংখ্যা বেরে যাচ্ছে "। হয়তো এ জন্যই পত্রিকার পাতায় আজ কাল হড়েক রকমের সৈনিকের নাম চোখে পরে। ৫২য় ফিডার খাওয়া শিশুও অনেক সময় ভাষা সৈনিক হয়ে যায়, একাত্তরে ঘরের নিরাপদ পরিবেশ আকাশবাণী বা স্বাধীন বাঙলা বেতার কেন্দ্র শোনা যুবাও হয়ে যায় বীর মুক্তিযোদ্ধা। আসলে মুক্তিযোদ্ধা সংখ্যা কতো ? আজকের ( ১৭ ডিসেম্বর ২০০৯ ) দৈনিক প্রথম আলোতে ( http://www.prothom-alo.com/detail/date/2009-12-17/news/25785) মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কত? আর্টিকেলটা পড়ে মনে হলো আসলেই প্রকৃত সংখ্যাটুকু কত ? এক লাখ, দুই লাখ না আরো বেশী !!

প্রত্যেক সরকারের সময়েই মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা নিয়ে জড়িপ চালানো হয়েছে, তালিকা করা হয়েছে। এর সবগুলোই দলীয় দৃস্টিভংগি থেকেই। আওয়ামী লিগ করা মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিয়েছে বিএনপি, একই কাজ করেছে আওয়ামী লিগ; যেনো দলীয় রাজনীতি করলে কারো মুক্তিযোদ্ধাত্ব খারিজ হয়ে যায়। সাধারন নির্দলীয় মুক্তিযোদ্ধাদের অবশ্য তালিকায় নাম উঠা দূরের কথা জড়িপের সময় কেউ খোঁজও নেয় না।

জানা যায়, চারটি খসরা ও একটি চুড়ান্ত তালিকা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যার শুরু সামরিক শাষক এরশাদের সময়ে ১৯৮৬-৮৭ সালে। সে সময়ের খসড়া তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১,০২,৪৫৮ বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে ৬৯,৮৩৩ জন মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকা রয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আমিন আহম্মদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, " ভারতে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁদের ছবিসংবলিত নাম-ঠিকানা তাঁরা ভারত সরকারের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন এবং এখনো তা সংরক্ষিত আছে।" তিনি জানান, ’৭৪-৭৫ সালে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রসঙ্গত, সেনা সদর দপ্তর থেকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে ’৮৬ সালে ওই তালিকা আমিন আহম্মদ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে। কল্যাণ ট্রাস্টে এ তালিকার ফটোকপি আছে। আর মূল তালিকা রয়েছে চট্টগ্রামে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারে। তবে এ তালিকায় মুজিব বাহিনী ও বিএলএফ সদস্যদের নাম নেই। ওই সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি হবে না বলে আমিন আহম্মদ জানান। এছাড়া কাদেরীয়া বাহিনী, হেমেয়েত বাহিনী, আফসার বাহিনীর মতো স্বীকৃত বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত সংখ্যা ও তালিকাও পাওয়া যায় না। এ ব্যপারে জেনারেল আমিন বলেন, " স্বাধীনতার ৩৮ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে বারবার এভাবে কাটাছেঁড়া করা আসলেই হাস্যকর। ভারত সরকারের হিসাব বিভাগে খোঁজ নিলেই প্রকৃত তালিকা পাওয়া যাবে। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেওয়া সবাই ভারত সরকার থেকে কম-বেশি ভাতা পেতেন।"

১৯৯৪ সালে বিএনপি সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভোটার তালিকায় ৮৬,০০০ ; ১৯৯৮ - ২০০১ সাল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের খসড়া তালিকায় ১৮৬,০০০ জন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাকে মুক্তিবার্তা তালিকা বলা হয়। আর ওই সময়ে পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়ে যায় প্রায় এক লাখ।

সর্বশেষ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে (২০০১-২০০৬) গেজেটে প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ ৯৮ হাজার ৮৮৯। তবে জোট সরকারের গঠিত জাতীয় কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখ ১০ হাজার ৫৮১ জন। অর্থাৎ জোট আমলে সংখ্যাটি আবার বেড়ে যায়। আশা করা যায়, আওয়ামী সরকারের সময় এ সংখ্যা আবারো বেরে যাবে।

এ ব্যাপরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক এ এস এম শামসুল আরেফিন বলেন, "মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা সবার আগে জরুরি। আর সেটি না থাকায় ঢালাওভাবে যে খুশি সে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যাচ্ছে তালিকায় নাম লিখিয়ে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। " অস্ত্র হাতে যিনি সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে যুদ্ধে গিয়েছিলেন আর যিনি তাদের সহায়তা করেছিলেন তাদের সম্মান কি সমান হতে পারে ? যদিও একজন শব্দ সৈনিক, একজন কলম সৈনিক, একজন সাহায্য কারী, একজন অস্ত্রধারী মুক্তিযোদ্ধা-- সবার চেস্টায়ই মুক্তিযুদ্ধ সফল হয়েছিলো।

ব্যক্তিগত ভাবে আমি ইবিআরসিতে সংরক্ষিত তালিকাকেই একমাত্র ও নির্ভরযোগ্য তালিকা মনে করি। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা একটি নির্দিস্ট প্রকৃয়ার মাঝ দিয়ে যেতেন। যুব ক্যাম্প হয়ে প্রশিক্ষন শিবির। এ সময়ে সবার নাম ছবি সহ তালিকা করা হয়। এ তালিকা সরকারের কাছে আছে। এ ছাড়া ২ নম্বর সেক্টরের বামপন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই আছেন যাদের নাম সরকারী তালিকায় নাও পাওয়া যেতে পারে। অন্যান্য বাহিনীর জন্য একই কথা প্রযোজ্য। এরকম একটি তালিকা করা কি একদমই অসম্ভব ? এ না হলে দেখা যাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বদনা আগিয়ে দেয়া কিশোরও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুবিধা নিতে ব্যস্ত, আর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যথারীতি সুবিধাবন্চিত।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।