সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০০৯

এবতাদুলের তেলেসমাতী

কি জাদু দেখাইলোরে এবতাদুল মিয়া ! ঢাকা - সৈয়দপুরে বিমানের সার্ভিস বন্ধ ৩ বছর হতে চল্লো। বেসরকারী ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সও বন্ধ করেছে প্রায় ৭ মাস হলো। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর শাখার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোঃ এবতাদুল ইসলাম এখনও বিমানে সৈয়দপুর থেকে ঢাকা ও রাজশাহী বিমানে যাতায়াতের কাল্পনিক বিল দাখিল করেছেন। তার যুক্তি, "এই রুটে বিমান না চলুক, বিমানে যাতায়াতের জন্য তো তিনি এনটাইটেল্ড।" সমকালের প্রতিবেদনে এসেছে ' বিমান চলাচল বন্ধ হওয়ার পরও বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর শাখার জিএম মোঃ এবতাদুল ইসলাম এ বছরের ২৭ এপ্রিল থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ৬ বার সৈয়দপুর থেকে ঢাকা ও রাজশাহী যাতায়াত বাবদ বিমান ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক ভ্রমণ ভাতা হিসেবে ৯০ হাজার ১৭৭ টাকার বিল উত্তোলন করেছেন "। এবতাদুলের মতে সবাই নাকি এটা করে, তাই উনিও করেছেন।

এই জাতীয় মানুষকে নৈতিকতা দেখিয়ে লাভ নেই। হাইকোর্ট দেখিয়েও লাভ নেই। যুগে যুগে এরা এসবই করেই সমাজে সম্মান নিয়ে চলছে। সমাজও এদের সম্মান দেয়,কারন এখনকার সমাজে টাকাও সম্মান লাভের অন্যতম মাপকাঠি। দূর্নীতি কি জিনিস সেটাও এরা জানে না কারন দূর্নীতিই এদের নীতি। এদের এসব বোধই নেই।মাঝ খান থাকে দেশের বারোটা বাজে। হুহ, এক সময় দেখা যাবে এই ব্যাটাই দূর্নীতি দমনের পন্থা নিয়ে টকশোতে মহা ব্যাস্ত। বয়সকালে হজ্বও করে ফেলতে পারে এবতাদুল মিয়া। সফেদ দাঁড়ির আড়ালে কালো টাকা হাসবে। আমরা তাকিয়ে দেখবো। ভালো ভালো। ভাবছি পিতার অসৎ টাকা নিয়ে সন্তানরা কি ভাবে !!

সমকালের খবরটি নিচে যোগ করে দিলাম, পারলে পড়ুন

-------------

বিমানে যাননি তবুবিমান ভ্রমণের বিল লাখ টাকা!

মোহন আখন্দ, বগুড়া ব্যুরো ( ৭ ডিসেম্বর , শেষের পাতা)
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রায় ৩ বছর আগে উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর বন্দর থেকে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। লোকসানের মুখে সেখানে বেসরকারি কোম্পানির বিমান সার্ভিসও ৭ মাস আগে বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর শাখার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোঃ এবতাদুল ইসলাম এখনও বিমানে সৈয়দপুর থেকে ঢাকা ও রাজশাহী বিমানে যাতায়াতের কাল্পনিক বিল দাখিল করেছেন। তার যুক্তি, এই রুটে বিমান না চলুক, বিমানে যাতায়াতের জন্য তো তিনি এনটাইটেল্ড।
চলাচল বন্ধ থাকার পরও ওই কর্মকর্তার বিমানে সৈয়দপুর-ঢাকা, সৈয়দপুর-রাজশাহী যাতায়াতের এমন অবাক করা তথ্য ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ এবং সরকারের বাণিজ্যিক অডিট অধিদফতরের পৃথক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। তদন্তকারীরা নিশ্চিত হয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর শাখার জিএম
এবতাদুল ইসলাম বিমানে ঢাকা ও রাজশাহীতে যাতায়াতের কাল্পনিক বিল দাখিল করে প্রায় ১ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অডিট বিভাগের পক্ষ থেকে এ ধরনের বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েও ফল হয়নি কোনো।
সূত্র জানায়, ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাংক চত্বরে সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিনের লাগানো মেহগনি গাছ কেটে ফেলার অভিযোগও উঠেছে। বর্তমান গভর্নর ড. আতিউর রহমান গত ২০ অক্টোবর ব্যাংকের রংপুর শাখা পরিদর্শনে যাওয়ার আগেই গাছটি কেটে ফেলা হয়।
সৈয়দপুর বিমানবন্দর সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২০০৬ সালের মাঝামাঝিতে সেখানে তাদের সার্ভিস বন্ধ করে দেয়। পরে বেসরকারি একটি বিমান কোম্পানি যাত্রী পরিবহন শুরু করে। কিন্তু অব্যাহত লোকসানের মুখে চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। ওই বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক শহীদুল আলম চৌধুরী সমকালকে বলেন, 'এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে সৈয়দপুর থেকে আর কোনো বিমান চলাচল করে না।'
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিমান চলাচল বন্ধ হওয়ার পরও বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর শাখার জিএম মোঃ এবতাদুল ইসলাম এ বছরের ২৭ এপ্রিল থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ৬ বার সৈয়দপুর থেকে ঢাকা ও রাজশাহী যাতায়াত বাবদ বিমান ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক ভ্রমণ ভাতা হিসেবে ৯০ হাজার ১৭৭ টাকার বিল উত্তোলন করেছেন। এসবের মধ্যে চলতি বছরের ১১ আগস্ট দাখিল করা ভ্রমণ ভাতার একটি বিলে (নং-৫৩) তার সৈয়দপুর থেকে ঢাকা যাওয়া-আসার বিবরণ সমকালের হাতে এসে পড়েছে।
ওই বিলটির বিবরণীতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপকের ৫ আগস্টের আদেশ অনুযায়ী তিনি ৮ আগস্ট রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। তিনি প্রথমে রেলপথে রংপুর থেকে পার্বতীপুর হয়ে সৈয়দপুর পর্যন্ত ট্রেনে যাওয়া-আসার ভাড়া দেখান ৬০০ টাকা। আর সৈয়দপুর থেকে বিমান পথে যাওয়া-আসার ভাড়া দেখানো হয় ১৩ হাজার ১৮৮ টাকা। ওই বিবরণীতে আনুষঙ্গিক খরচসহ মোট ১৬ হাজার ৫৬৩ টাকার বিল দাখিল করা হয়। একইভাবে ২৭ এপ্রিল ১৭ হাজার ২৪৮ টাকা, ৭ জুন (সৈয়দপুর-রাজশাহী) ৬ হাজার ৩১৫, ১০ নভেম্বর ১৬ হাজার টাকা এবং ওই সময়ের মধ্যে আরও দু'দফায় পৃথকভাবে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, জিএমের দাখিল করা ভ্রমণ বিলে বিমান ভাড়া পরিশোধের ক্ষেত্রে আপত্তি জানানোর কারণে ব্যাংকের সংশিল্গষ্ট অডিট শাখার কর্মকর্তারা তার রোষানলের শিকার হন। পরে উত্তোলন করা ভ্রমণ বিলের সবগুলো বিবরণী সংশিল্গষ্ট শাখা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। এর পর ১৩ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া বাণিজ্যিক অডিট অধিদফতরের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের নিরীক্ষা ও হিসাব রক্ষণ বিভাগের অডিটকালেও সেগুলো উপস্থাপন করা হয়নি।
বাণিজ্যিক অডিট অধিদফতর রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের নিরীক্ষা ও হিসাব রক্ষণ অফিসার বীরেন্দ্র নাথ প্রামাণিক সমকালকে বলেন, অডিটকালে ২১টি বিষয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ রয়েছে, তাতে বিমান সার্ভিস বন্ধ থাকার পরও সৈয়দপুর থেকে ঢাকা যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিমান ভাড়ার বিল নেওয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।'
সার্ভিস বন্ধ থাকার পরও বিমান ভাড়া উত্তোলন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর শাখার জিএম এবতাদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, 'বিমান কবে বন্ধ হয়েছে সেটা আমি জানি না। আমি শুধু জানি বিমানে যাতায়াতের জন্য আমি এনটাইটেল্ড। তাছাড়া আমাদের আরও অনেকেই এভাবে বিল দাখিল করে থাকেন।'

২টি মন্তব্য :

  1. এমন সব কৌতুককর খবরে আজকাল হাসিও আসেনা, এক ধরণের ভীতি কাজ করে। কী অনায়াসে, কী নির্বিকারচিত্তে নীতিহীনতার নিত্য- নতুন রাস্তা বের করে তাতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এরা!

    চট্টগ্রামে একজন আছেন, ডাঃ আমীন, এখন মনে হয় মন্ত্রীটন্ত্রী হবেন। মাসদুতিনেক আগে পত্রিকায় দেখলাম উনার পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত সহকারী পর্যন্ত সবাই একটা করে ফোরহুইলড্রাইভ ব্যবহার করেন, যেগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের। গাড়ীর চালক ও জ্বালানীর খরচও বন্দর থেকে নেয়া হয়। মজার ব্যাপার হলো এই তথ্য বের হবার কয়েকদিনের মাথায় আওয়ামী লীগের ইউরোপ শাখার কাজকারবার দেখতে ইউরোপ সফরে যান এই মন্ত্রীসাহেব। সেখানে দূতাবাসের গাড়ি ব্যবহার না করে পাবলিকে ট্রান্সপোর্টে চড়েছেন বলে ধন্য ধন্য রব উঠেছিলো ব্লগে :)

    নুশেরা

    উত্তরমুছুন
  2. আমিও অবাক হই না। চারপাশে এতো এতো দেখছি যে মাঝে মাঝে মনে হয় "ভালো মানুষ" বলে আর কিছু মনে হয় আর অবশিষ্ঠ নেই। দেশে একজন সরকারী চাকুরে কত টাকা বেতন পায় সেটা আমরা জানি। অথচ একজন চাকুরের সন্তান যখন এখানে এসে ফ্লাট কিনে, এককালীন টাকা দিয়ে দামি গাড়ি কিনে, মাসে লাখ টাকা উড়িয়ে বেরায় তখন অবাক হলেও মাঝে মাঝে ভাবী এই টাকার উৎস নিয়ে সেই ছেলে বা মেয়েটা কি একবারো ভাবে ! এভাবেই মনে হয় বংশ পরম্পরায় দূর্নীতি চলতে থাকে। এসবের কাছে তো পোস্টের এবতাদুলের কান্ড খুবই সামান্য

    উত্তরমুছুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।