রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০০৯

ঈদ উল আজহা উর্ফে বকরির ঈদ উর্ফে বকরা ঈদ কেমন কাটিলো !



বৈদেশে ঈদ কেমন হইয়া ‌থাকে তাহা নিয়া সদ্য প্রাচীনকালে শত শত দিস্তা কাগজ খরচ হইয়া থাকিলেও আজকালকার পৃথিবীতে সেই শত শত দিস্তার কাগজের বদলে শত শত আন্তর্জালিক পাতা ভড়িয়া উঠে ঈদ লইয়া। মানুষের কস্ট, সুখ, আনন্দ - হাসি কান্নায় ভড়া ঈদের গল্প পড়িয়া চিত্ত কখনো প্রফুল্ল হইয়া উঠে, কখনোবা কস্ট ভাড়াক্রান্ত হইয়া উঠে। কেউবা ঘুমাইয়া ঈদ পালন করেন, কেউবা ঘুড়িয়া বেড়াইয়া। নাতিদীর্ঘ প্রবাস জীবনে কত ঈদ পার করিয়াছি সেটা নিয়ে অনেক গল্প জমিয়া আছে। সময় করিয়া কোনো একদিন সেটা বলা যাইবে।

কেনো জানি ইশ্বর ঈদের সময় আমাকে অভাবগ্রস্থ করিয়া ফেলেন। বছরের অন্য সময়গুলোতে অর্থ সংকটে না থাকিলেও বিধাতার ক্রীপায় কেনো জানি এবারো অর্থ সংকটে পড়িয়া গেলাম ( শেষ খবরঃ সামলাইয়া উঠিয়াছি)। ঈদের নামাজের সময়টুকু ঘুমাইয়া পার করিয়াছি। মধ্যাহ্ন ভোজন সাড়িয়া স্ত্রী-পুত্র সহকারে একটি দূরদর্শন যন্ত্র কিনিবার উদ্দেশ্যে বাজারে গমন করিলাম। অনেক বাছিয়া - অনেক যাচাই করিয়া একটি বৃহৎ চকচকে এলসিডি দূরদর্শন যন্ত্র কিনিয়া গৃহে প্রত্যাবর্তন করিয়া সদ্য কেনা যন্ত্রের ছবি দেখিয়া মুগ্ধ দৃস্টিতে তাকাইয়া মনে করিলাম ইহাই আমার ঈদ।

ডাউনআন্ডারের রাজধানী ক্যানবেরায় অল্প কিছু বঙ্গদেশীয় সন্তানের বসবাস। সংখ্যায় তাহারা খুব কম না হইলেও অন্যান্য শহরের তুলনায় অল্পই বলা যাইবে। চেস্টা করিলে একে অপরের হেঁসেলের খবরও জানা যায় এরকমটি ক্ষুদ্র সমাজে প্রতি ঈদে খোলা বাড়ী (ওপেন হাউজ) করা হইয়া থাকে। এবারে সেটা হইয়া উঠেনি কিছু অভদ্র বঙ্গসন্তানের ষড়যন্ত্রে। ইহারা দেশ বদল করিয়াছে স্বভাব বদল করিতে পারে নাই। উহারা ইর্ষান্বিত বোধ করিয়া - নিজের নাক কাটিয়া হইলেও অন্যের যাত্রা ভংগ করিবার শিশুসুলভ আচরনে এটা না করিতে দিয়ে নিজেদের মনের ক্ষুদ্রদিকটি আবারো উন্মোচন করিলো। হতাশ হইয়াছি ইহাদের আচরনে।

আজ মধ্যাহ্নভোজনে নিমন্ত্রন ছিলো এক ভদ্র পরিবারে। স্বগৃহ হইতে বাহির হইবার সময় আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখিয়া আতংকিত বোধ করি নাই, ক্যানবেরার আকাশে এরকম শত কালো মেঘ দেখইলেও বৃস্টি দর্শন কদাচিৎ ঘটিয়া থাকে। উদ্দিস্টে যখন পৌঁছিয়াছিলাম তখন প্রায় বৃস্টিতে ভিজিবার উপক্রম। খাদ্য উপাদেয় হয় নাই। ছোট মাছের চচ্চরি, শুটকি, লাউ সহকারে চিঙড়ি, সব্জি ভাজি, গো মাংস, কুক্কুট তরকারী ভক্ষন করিয়া অতৃপ্ত মনে এটাই ভাবিতেছিলাম গৃহস্বামী কথার সাথে সাথে রন্ধনেও পারদর্শী হইলে খাদ্য আরো উপাদেয় হইতো। তবে আন্তরিকতায় ঘাটতি ছিলো না একদমই। ইহা ভালো লাগিয়াছে।
আসিবার পথে স্ত্রীর এক সহপাঠীর গৃহে গমন করিলাম। কিছু সময় কাটাইয়া যখন স্বগৃহে ফেরত আসিলাম তখন সূর্যদেবতা অস্তগামী।

এবারের ঈদে দেশে পিতা মাতার কাছে অর্থ প্রেরণ করিয়াছি, নতুন দূরদর্শন যন্ত্র কিনিয়াছি, স্ত্রী পুত্র সহকারে ঈদ করিয়াছি, স্ব হস্তে বিরিয়ানী রাঁধিয়াছি, দূর হতে স্বজনদের সংক্ষিপ্ত বার্তা পাইয়াছি, নিরাপদে শান্তিতে দিনযাপন করিতে পারিয়াছি -- এইতো আমাদের ঈদ। বাকিসকল তুচ্ছ হইয়া যায় শিশু পুত্রের হাসির কাছে।


কার্টুন সত্বঃ সুজন চৌধুরী

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।