রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

গ্যারাজের সেই ল্যান্ড রোভার

বেশ কবছর আগে কালীগন্জে বেড়াতে গিয়ে থানার কোয়ার্টারে ওসি সাহেবের বাসার সামনের গ্যারাজটি যেমনটি দেখেছি, ২০ বছর আগে সেমনটিই দেখেছিলাম। শান বাঁধানো পাকুর গাছের নিচে সেই গ্যারাজে সে সময় একটি ধুলোয় ঢাকা ল্যান্ড রোভার পার্ক করা ছিলো। সেবার বেড়াতে গিয়ে সেটা দেখতে পাইনি। শুনেছি সেটা নাকি নিলামে বিক্রি করা হয়েছিলো অল্প কিছু টাকায়। হয়তো সেই ল্যান্ড রোভারটি এখন চাঁদের গাড়ি হিসেবে বান্দরবনের পাহাড়ে উঠো নামা করছে। অনেক স্মৃতিমাখা সেই ল্যান্ড রোভার। একসময়ে সারা ঢাকা দাবড়িয়ে বেড়ানো ল্যান্ড রোভারটিতে চড়ে বঙ্গবন্ধু ৭০ এর নির্বাচনের প্রচারনায় ব্যবহার করেছিলেন নিয়মিত। ল্যান্ড রোভারটির মালিক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ময়েজউদ্দিন।

আজ থেকে ঠিক ২৫ বছর আগে, ১৯৮৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কালীগঞ্জে স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে হরতাল কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হয়েছিলেন ময়েজউদ্দিন। প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে উনাকে হত্যা করেছিলো যে আজম খান, সে এখন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির বড় নেতা। বিচারে আজম খানের যাবজ্জীবন কারাদন্ডও হয়েছিলো। স্বৈরিচারী এরশাদ তখন রাস্ট্রপতি। কালীগন্জ রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে লে.জে হোমো এরশাদ আজম খানকে সবার সামনে নিজের ছোট ভাই হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো। অবশ্য এর আগে আজম খানকে সাধারন ক্ষমায় মুক্তি দিয়েছিলো তার বড়ভাই এরশাদ।

আজকে ২৫ বছর পর মহাজোটের শরিক হিসেবে জাতীয় পার্টিও সরকারের অংশীদার। আজম খানও আজ জাতীয় পার্টির বড় নেতা হিসেবে মহাজোটেরও বড় নেতা।

ময়েজউদ্দিন যখন মারা যান মেয়ে মেহের আফরোজ চুমকি সময় অনেক ছোট। সে সময়কার ছোট্ট চুমকি আজ নির্বাচিত সংসদ সদস্য। ১৯৯৬-২০০১ সংসদেও উনি সংসদ সদস্য ছিলেন। সরকারী বিভিন্ন অনুস্ঠানে হয়তো আজম খানের সাথে দেখা হয়, হয়তো পাশাপাশি বসে ইফতারও খেয়েছেন। কেমন লাগে বাবার খুনির সাথে বসে ইফতার খেতে ! চুমকি আপা বলবেন কি ?

একসময় এই আমাকেই বলেছিলেন " ক্ষমতায় গেলে বাবার হত্যার বিচার করবো " ।
আজ আপনারা ক্ষমতায়। বিচার কি করা যাবে চুমকি আপা ?
আপনি কি একবারো সেই নিরীহ দরিদ্র কিন্তু অসীম সাহসী সেই ধোপার সামনা সামনি হবার সাহস রাখেন যিনি শত হুমকির মুখেও স্বাক্ষী দিয়েছিলো যখন আর কেউ সাহস রাখেনি ?

আজ শহীদ ময়েজউদ্দিনের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশের হাজারো রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের বিচার না হবার মতো এটিও একটি।

1 টি মন্তব্য :

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।