শুক্রবার, ৩১ জুলাই, ২০০৯

অতিথি দেবতা

চাকুরিগত কারনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে সব সময়ই কথা বলতে হয়। শরীরের রঙ ও উচ্চারনের ভিন্নতার কারনে কোন দেশ হতে এসেছি সেটা অনেকেই জিজ্ঞেস করে থাকেন। বেশীর ভাগ মানুষের ধারনা আমি হয়তো ভারতে হতে আসা। যখন উত্তর হয় ‘বাংলাদেশ’ তখন বেশীর ভাগই চিনতে পারেন না। এতে প্রথম প্রথম অবাক হলেও সময়ে সেটা স্বাভাবিক ভাবেই নেই। পৃথিবীর গুরুত্বের তালিকায় বাংলাদেশ এতো নগন্য যে না চেনাটাই স্বাভাবিক। বছর বছর বন্যা – ঘুর্নিঝড় বা রাস্তায় রাজনৈতিক হাংগামা ছাড়া ভালো খবর খুব কমই আসে এসব দেশের মিডিয়াগুলোতে। মাঝে মাঝে ড. ইউনুস ও উনার গ্রামীন ব‌্যাংক নিয়ে যা একটু খবর আসে। যাই হোক,অনেকেই জানতে চান বাংলাদেশ সম্পর্কে। মনের মাধুরি মিশিয়ে বলি। বেড়ানোর জায়গা সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। বলতে বলতে কক্সবাজারের কথা এসেই যায়।

প্রকৃতির সপ্ত-আশ্চর্যের শর্ট লিস্টে কক্সবাজারের নাম যখন নেই শুনতে পেলাম, তখন খারাপ লাগলেও অবাক হয়নি। হয়তো বড়াই করে আমরা বলি পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, কিন্তু বড়াই করে বলতে পারি না সেখানকার সুযোগ সুবিধাগুলোর কথা। নিজের অভিজ্ঞতার কথা বাদ দিয়েই একজন বিদেশী কক্সবাজারে বেড়াতে যাবার পরিকল্পনা করলে কি করবেন সেটা চাকুরিগত অভিজ্ঞতা দিয়েই আন্দাজ করতে পারি।

আন্তর্জালে কক্সবাজারকে নিয়ে পুর্নাংগ কোনো অফিসিয়াল ওয়েব সাইট এখনো দেখতে পাইনি যা দ্বারা কোনো পর্যটক প্রাথমিক তথ্য থেকে শুর করে একটা হোম ওয়ার্ক করতে পারবেন। একজন পর্যটক বিদেশে বেড়াতে গেলে অবশ্যই হোমওয়ার্ক করে যান, আমার পর্যবেক্ষন ও অভিজ্ঞতা তাই বলে।

অনলাইনের কোনো ওয়েবসাইটেই হোটেল /মোটেলে রুম বুকিং দেবার কোনো ব্যবস্থা নেই। অনলাইনে কক্সবাজারের কোনো হোটেল/মোটেলের সেরকম ওয়েবসাইট দেখতে পাইনি যা দ্বারা কোনো বিদেশী পর্যটক রুম বুকিং দিতে পারেন বা সেই হোটেল/মোটেল/রেস্ট হাউজ সম্পর্কে ধারনা নিতে পারেন। বেশীর ভাগ বিদেশী পর্যটকই বুকিং ছাড়া কোথাও যেতে চান না। ব্যাক প্যাকারদের ক্ষেত্রে অবশ্য সেটা তেমন খাটে না।

পর্যটন তথ্যের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। বিদেশ হতে অনেকেই হয়তো বিমানে এসে ঢাকায় এসে নামলেন। সেখান থেকে কক্সবাজারে যেতে হলে কিভাবে যাবেন সেটা একজন নতুন মানুষের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব একটা ব্যপার। পর্যটন কর্পোরেশনের একটি বুথ থাকলেই অনেক সময়ই সেটা হয় বন্ধ পাওয়া যায় বা দরকারী তথ্য পাওয়া যায় না। যেকোনো ভাবেই হোক সেই পর্যটক কক্সবাজারে এসে পৌঁছুলেন। এর পর ? কোথায় থাকা যাবে, কোথায় ভালো খাবার পাওয়া যাবে , কিভাবে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া যাবে ইত্যাদি নানাবিধ তথ্যে পাবার জন্য কক্সবাজারে কোনো ব্যবস্থাই নেই। “তথ্যকেন্দ্র” এটা যেকোনো পর্যটন কেন্দ্রের জন্য ফরজ জিনিস।

একজন বিদেশী পর্যটক শুধু বালি দেখতে আসবে না বা মুখের কথায় সমুড্র সৈকত দেখতে চলে আসবেন না। জেনে শুনে ও পৃথিবীর অন্যান্য ট‌্যুরিস্ট স্পটের সাথে তুলনা করেই আসবেন। যতই বড়াই করি পযটন কেন্দ্র হিসেবে কক্সবাজার এখনো শিশু।

কক্সবাজারে হয়তো হোটেল /মোটেল নামে কিছু বিল্ডিং তৈরি হয়েছে কিন্তু চরম অপেশাদারীভাবে সেগুলো চলছে। স্থানীয় মানুষের বিরূপ আচরন ও সুযোগসন্ধানী মনোবৃত্তি, বাজে আইন শৃংখালা পরিস্থিতি, সৈকতে সুযোগ সুবিধার অভাব । পর্যটক আকর্ষন করতে হলে কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতেই হবে। মাঝে মাঝে ভাবি দেশের পর্যটনের বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গাগুলোকে নিয়ে ঠিক মত প্রচারণা, যোগযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, থাকা খাওয়ার সুব্যাবস্থা, সার্বিক নিরাপত্তা, সুন্দর ভাবে উপস্থাপন, দায়িত্ত্বশীল নজরদারী, পর্যটকদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা, আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার, সর্বোপরি যা যা করা দরকার তা যদি আমরা দ্বায়িত্ত্ব নিয়ে এবং আন্তরিকতার সাথে করি, তবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পর্যটক তথা বিশ্ববাসীর নজর কাড়বেই। আর পাশাপাশি আমাদের দেশের সুনাম যেমন বাড়বে তেমনি জাতীয় আয়ে এক বড় ভুমিকা পালন করবে।

একজন বিদেশী পর্যটক যা আশা করেন তা পুরন না করতে পারলে হাজার ভোটাভুটি করেও লাভ হবে না। যেখানে স্থানীয় পর্যটকদেরই কক্সবাজারে এসে হাবুডুবু খেতে হয় সেখানে বাহিরের মানুষদের অবস্থা চিন্তা করলে নিজেরই খারাপ লাগে।

কিছু দিন আগে এখানকার টিভিতে “অতিথি দেবতা” শীরোনামে একটা বিজ্ঞাপন দেখাতো। প্রাইম টাইমে দেখানো সেই কমার্শিয়ালে ভারতের পর্যটনকে তুলে ধরা হতো। দেখা মনে হতো, বাংলাদেশেও অনেক কিছু আছে দেখাবার মতো কিন্তু আমরা অতিথিকে দেবতা না মনে করে মুরগি মনে করছি, যেনো পেলেই জবাই করা হবে।

এ অবস্থা শুধু যে কক্সবাজারে নয়,দেশের অন্য সব আকর্ষনীয় জায়গাতেই। আমরা শুধু যে আমাদের দেশকে পৃথিবীর কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছি তাই নয়, বিশাল এক ব্যবসা হারাচ্ছি।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।