শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০০৮

নিদারুন কস্টের এক গল্প

নাম করনে গল্প হলেও পৃথিবীর কোনো এক অংশে অভিনীত এক নাটকের ছোট্ট একটি অংশ এটি। জীবনের চলার পথে জনৈক বন্ধুর কাছ হতে শোনা ঘটনাটি শুনতে শুনতে ভাবছিলাম এমনোও কি হয় !

জীবনে কতো কিছুই না ঘটে। কিছু ঘটনা হয়তো স্মৃতি হতে ধীরে ধীরে মুছে যায় , কিছু স্মৃতি মনের গহীন অতলে ঠিকই ধিকি ধিকি করে জ্বলতে থাকে। গল্পটি না হয় সেই বন্ধুর মুখ থেকেই শোনা যাক।

" সারা রাত কাজ শেষে বাসায় যখন এসেছিলাম ঘড়িতে তখন ভোর ৪ টা। প্রচন্ড ক্লান্ত, ততোধিক ভয়াবহ খিদে। দু প্যাকেট নুডুলস সেদ্ধ করে তাতে সামান্য কিছু মিক্সড ভেজি মিশিয়ে ঘুমুতে যাবার সময় ঘড়িতে এলার্ম সেট করতে ভুলিনি। সকালে দূর শহর হতে আমাকে দেখতে আসবে। এতোদিন জানতাম মেয়েদেরই দেখতে আসে, এখন ছেলেদেরও দেখতে আসে। মেয়েদের যদি আনুস্ঠানিক/অনানুস্ঠিক ভাবে দেখতে যাওয়া যায় তবে ছেলেদের ব্যপারে কেনোইবা তার ব্যতিক্রম হবে ?

প্রচন্ড টেনশন হচ্ছিলো। সুন্দর কাপড় পড়তে হবে, ভালো করে নিজেকে তাদের সামনে উপস্থাপিত হতে হবে। আচ্ছা কি ভাবে কথা বল্লে তারা ইমপ্রেসড হবেন ! ইত্যাদি নানান সব ভাবনা। ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টেরই পাইনি।

মোবাইলের রিঙের শব্দে ঘুম যখন ভাঙলো তখন ঘড়ির কাঁটা কোন ঘরে ছিলো সেটাও মনে নেই। আজকালকার ডিজিটাল ঘড়িতে অবশ্য কাঁটার বদলে সংখ্যা ভাসে। অচেনা নাম্বার থেকে ঘুম জড়ানো গলায় হ্যালো বলতেই শুনতে পেলাম উনারা আর মাত্র ১ ঘন্টার দূরত্বে রয়েছেন। ক্লান্ত শরীরে এটা শোনার পরও আবার কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনে নেই। ঘুম যখন ভাঙলো তখন দড়জায় উনারা দাঁড়িয়ে। গরীবের ভাঙা কুটির দেখে আশাহত যে হয়েছিলেন সেটা বুঝতে পেরেছিলাম। চা এর কথা বলতেই উনারা বল্লেন বাহিরে কোথায় খেতে খেতেই না হয় আলাপ সারা যাবে।

পকেটে একাউন্ট নিংরে বের করা সবটুকু টাকা নিয়ে রেস্টুরেন্ট গিয়ে ভাবছিলাম কি কথা হবে। মানুষের চোখ নাকি অনেক কিছু বলে দেয়। আমি তাদের চোখ পড়বার চেস্টা করছিলাম। চেস্টা করছিলাম তাদের গলার স্বর থেকে মনের ভাব বোঝার। আপ্রান চেস্টা ছিলো তাদের সন্তুস্ট করবার। কত কিছু ভেবে রেখেছিলাম। কিছুই জানতে চাইলেন না। কথায় দায়সারা ভাব, যেনো ইন্টারভিউ বোর্ডে আগেই সিলেক্ট করা প্রার্থীকে চাকুরি দেবার জন্য অন্য সব প্রার্থীকে অবান্তর অপ্রাসংগিক সব প্রশ্ন করা।"

তার পর কি হলো বস ?

" কি আর হবে, সব কিছু শেষে উনারা আমাকে নামিয়ে চলে গেলেন। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম উনাদের গাড়ি আস্তে আস্তে ধীরে দূরে হারিয়ে যাচ্ছে।"

তার পর?

" তারপর আর কি, জীবন জীবনের মতো চলতে থাকে। স্বপ্ন দূস্বপ্নে পরিনত হলো। এক সময় সব কিছুই স্বাভাবিক হয়ে এলো তবুও সে সব ঘটনা ভুলতে পারি না। মাঝে মাঝে শেখ সাদির সেই গল্পের কথা মনে পরে; পোষাক দিয়ে মানুষ যাচাই। টাকা দিয়ে মানুষ যাচাই, চেহারা দিয়ে মানুষ যাচাই। অথচ কেউই মানুষের ভেতরটাকে দেখতে চায় না, জানতে চায় না, বুঝতে চায় না। "

তার পর ?

"জীবনতো আর থেমে থাকে না। ভালো আছি, সুখে আছি, শান্তিতে আছি । সে সময় সব কিছুই বুজতে পেরেছিলাম, প্রসন্ড কস্স্ট লাগছিলো কিন্তু সবসময় জানতে ইচ্ছে হয় ঠিক কি কারনে উনারা আমাকে অপছন্দ করেছিলেন।"

টেলিফোনে হাজার মাইল দূর থেকেও উনার দীর্ঘনিঃশ্বাষ শুনতে পাচ্ছিলাম। জীবনটা আসলেই বড্ড বিচিত্র। বিশাল এক নাট্য মন্চ, আমরা যার যার ভুমিকায় অভিনয় করে যাচ্ছি সুনিপুন ভাবে।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।