সোমবার, ৩০ জুন, ২০০৮

গল্পঃ সাদা কালো

-- ভ্রাতা তোমার কাছে কি অতিরিক্ত ১ ডলার হইবে? ট্রেনের টিকিট কিনিবার জন্য কিছু ডলার কমতি পড়িয়া গিয়াছে।
এই সাত সকালে মুখ হতে ভক ভক করে বিয়ারের গন্ধ বেরুচ্ছে। বিরক্ত ভংগিতে তাকাতেই দেখে এক এবরোজিনি হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছে নাফিজের দিকে।
'তোমার ভগ্নির সহিত উপগত হইতে চাই' মনে মনে একটা গালী দেয় নাফিজ। ভাগ্যিস মানুষ মনের কথা পড়তে পারে না। -- না, ভ্রাতা আমার কাছে তোমাকে দেবার মতো অতিরিক্ত ডলার নেই। পকেটে অবশ্য কিছু ভাংতি আছে। ভাবছে দেবে না কি ১ ডলার!
-- নো ওরিস মাইট।
--ভ্রাতা তুমি কি ভারতবর্ষ হইতে আগমন করিয়াছ?
'শালার কাউলা' বলে মেন মনে আরেকটি গালী দেয়। আজকাল গালী দেবার বদঅভ্যাস হয়ে গিয়েছে।
-- না ভ্রাতা, আমি বাংলাদেশ হইতে এই পান্ডববর্জিত দেশে আগমন করিয়াছি।
-- এটা কোথায় ?
অবাক হয় না নাফিজ। বাংলাদেশ নামক ছোট্ট দেশটিকে চেনার দরকার নেই এদের, চিনতেও পারে না।
-- ভ্রাতা, তোমাকে দেখিতে তো আমাদের মতোই মনে হয় ?
কাউলা বলে কি ! নাফিজ একটু অবাক হয়। সে কি দেখতে এবরোজিনিদের মতো দেখতে? সবাইতো বলে ও নাকি অনেক ফর্সা। আয়নায় আজ ভালো করে দেখতে হবে। তার নাকটা একটু মোটার দিকে তাই বলে এবরোজিনিদের মতো এতো বদখত না।
নাফিজকে অবাক হতে দেখে লোকটি একটু হাসে।
-- ভ্রাতা আমি এলেক্স। আমাকে দেখিয়া কি মনে হইতেছে যে আমি মাতাল? মুখ বাড়িয়ে হো হো করে হাসা শুরু করে। আশে পাশের মানুষ অবশ্য অবাক হয় না। রেডফার্ন ষ্টেশনে এরকমটি প্রায়শই দেখা যায়।
-- বুঝিয়াছো ভ্রাতা, আমি এক জারজ এবোরিজিনি। আমার বাবা ছিল এক জারজ সাদা। আমার মার সাথে উপগত হইয়া আমাকে পৃথিবীতে আসার সুযোগ করিয়া উনি ধন্য হইয়াছিলেন। তার পর আমাকে বাহ্য পদার্থের মতো আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করিয়া উনি নরকবাসী হইয়াছেন। রক্তে আমি সেই আজো জারজ সাদা রক্ত বহন করিয়া চলিয়াছি, মৃত্যতক বহন করিবো।
নাফিজ এলেক্সের দিকে তাকায়। একটু অবাক হয়। এলেক্সকে একটু অন্যরকম লাগছে তার।
-- সি ইয়া মাইট, অনেক ভালো লাগিলো তোমার সাথে গল্প করিতে। দেখি অন্য কারো কাছ হইতে কিছু ডলার পাওয়া যায় কি। আজ আমার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। মায়ের কবরে ফুল দিতে যাইবো। কিন্তু ট্রেনের টিকিট কিনিতে পারিতেছিনা। তোমাকে বিরক্ত করার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
পকেটে হাত দিতে গিয়েও থেমে যায় নাফিজ।
-- সি ইয়া। এলেক্সকে দেখে আরকজনের কাছে হাত পেতে ডলার চাইতে।
ট্রেন আসছে দেখে নাফিজ সামনে এগিয়ে যায়। ট্রেনে উঠার পর ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজের কাজে। আশে পাশে সবাই ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে। পেছনের সিটে এক ছেলের কথা শুনে কান পাতে। মনে হচ্ছে বাংলাদেশীই হবে, খুব সম্ভবত ছাত্র।

অফিসে ঢুকতেই দেখে তার প্রজেক্ট ম্যানেজার নতুন বিএ মেয়েটির সাথে আলাপচারিতায় ব্যস্ত। এ লোকের কাজই হচ্ছে অফিসে নতুন কেউ জয়েন করলে তাকে নিয়ে বিছানায় যাবার চেস্টা চালানো। অথচ সে ২ বাচ্চার বাবা একজন সংসারী মানুষ।
-- হাই নাফিজ, কেমন চলিতেছে চ্যাম্প?
-- ভালোই চলিতেছে ঠিক যেমনটি তুমি আশা করিতেছ।
হাহাহা করে হেসে পিএম বলে নাফিজ ডিফেন্সের নতুন এক বিশাল প্রজেক্ট আসিয়াছে। সামনে কঠিন সময়, যন্ত্রে তেল দাও।
কঠিন সময় ! হুহ্ ডিফেন্সের কাজ মানেইতো এক গাদা মিটিং, এক গাদা ট্যুর। আর তার ভাগে এক গাদা বিরক্তিকর ডকুমেন্টশন, মাথা গরম করা সব এনালাইসিস।
সিগারেটের তৃষ্ণা পেয়েছে খুব। পেছনের বেলকনীতে সিগারেট ধরিয়ে জানালার কাঁচে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে চমকে উঠে। এলেক্স দাঁড়িয়ে আছে ! ধুর !! সিগারেটে জোরে কয়েকটা টান দিয়ে ভাবছে পিএম এর কথা। শালা ওকে এবারো প্রজেক্টের ফোকাসে আনবে না। তাকে দিয়ে সব কাজ করাবে কিন্তু নাম হবে নতুন বিএ মেয়েটির।
কাঁচে আবার নিজের প্রতিবিম্ব দেখে। তার রঙটাকি সাদা হলে সুবিধে হতো?

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।