বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০০৮

ক্যানবেরার খেরোখাতা ৩

১.
সেদিন এক দেশী ভাইয়ের সাথে আলাপচারিতা। কথায় কথায় উনি খালি বলেন, সুমন শুনছো " অজি ডলার না আম্রিকান ডলারের সমান হয়ে যাচ্ছে ! "অজি ডলারের এই তেজী ভাব দেখে সেই দেশী ভাইয়ের জিহাদী জোশ জেগে উঠেছে দেখে ভালো লাগবে না মন্দ লাগবে সেটা বুঝতে পারছিলাম না। হয়তো ঢাকায় একটা ফ্লাট কিনতে উনার কম টাকা খরচ হবে ভেবে উনি পুলকিত কিন্তু আমি শংকিত। অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা গম থেকে যে আটা হবে সেই আটা কেনার জন্য আমার ডায়বেটিস রোগী বাবাকে ক্রমাগত বেশী টাকা খরচ করতে হচ্ছে, অথচ আয় এক বিন্দু বাড়ছে না আমার অবসরভোগী পিতার।
সেদিন ফোনে মার সাথে কথা বলছিলাম। সব সময় সেই একই কথা। জিনিস পত্রের দাম বাড়ছেই, বিদ্যুত কতক্ষন থাকে সেটাই আলোচনার বিষয়, পানি সাপ্লাই এই আছে তো এই নেই, বাড়ি ভাড়া বারাবার জন্য বাড়িওলার নোটিশ, বৃদ্ধ গাড়িটার সিএনজি খরচও দ্বিগুন হচ্ছে, সামনের মাসে ডাক্তার দেখাতে হবে, ছোট বোনটার টিউশিন ফি দিতে হবে। আমি শুনি, চুপ করে থাকি। মা হয়তো ভাবেন, ছেলে এড়িয়ে যাচ্ছে। এদিকে আমি অসহায়।
এদিকে শুনছি নার্গিস ধেয়ে আসছে ! বিধাতা নার্গিসকে তুমি মেরে ফেলো। বাংলা এই নার্গিসকে চায় না।

২.
অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব এই ক্যাঙারুর দেশেও পড়ছে। বাজার করতে গেলে বাজারে আগুন লাগার উত্তাপ টের পাই। এই কনকনে শীতেও ঘেমে যাই। কপালে ঘামের আভাসে আলতো হেসে কেনাকাটা সারি। ৪ বছর আগে যে জিনিস ১।৫ ডলারে কিনতাম সে একই জিনিস আজ ৩ ডলারে কিনি। কাল হয়তো সেটাই ৪ ডলারে কিনবো। যে ৫০ ডলারের শপিং এ ট্রলি ভর্তি হয়ে যেতো সেই একই জিনিস কিনতে আজ ১০০ ডলার লাগছে, ট্রলির জায়গায় তখন শপিং বাস্কেট ভর্তি হয়। অথচ বাজার ভর্তি জিনিস, কোনো কিছু টের পাবার উপায় নেই। মাঝ খানে সীমিত আয়ের মানুষগুলো অবস্থা করুন। ক্রেডিট কার্ডের ইন্টারেস্ট বাড়ছে, ক্রেডিট কার্ড হতে খরচ করছে, আয় বাড়ছে না, ক্রেডিট কার্ডের লোনও শোধ হচ্ছে না।

ভাগ্যিস বাড়ী কেনার সৌভাগ্য বা দূর্ভাগ্য হয়নি এখনো, নইলে মর্টগেজের টাকা শোধ করতে গিয়ে জান কয়লা হয়ে যেতো।
৩.
শীত আসবে আসবে বলে চলেই এসেছে। গত রাতে শুনেছি ০ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছিলো। আজ শুনছি সেটা -১ এ চলে যাবে। ক্যানবেরার এই শীত আসলেই সেই রকম। খবরে দেখলাম দু ঘন্টার ড্রাইভ দূরত্বে অস্ট্রেলিয়ান আল্পসে বরফ পড়ছে। ৪ বছরের ক্যাঙারু জীবনে সেখানে যাওয়া হয়নি। এবারো হবে না। হয়তো আশে পাশের অনেক বাঙালীর অনেকেই যাবে। ছবি তোলা হবে অনেক তবে যে জন্য যায় সবাই সেই আইস স্কিইং করা হবে না। বাঙালীর জানের মায়া যেরকম কঠিন, হাড়ের ভঙুরতাও সেই রকম।
এবারের শীতটাও সেই যুগপুরাতন কালো জ্যাকেটটা চালিয়ে দেবো, ক্যানবেরার শীতে এই বৃদ্ধ জ্যাকেট পারফেক্তো।
৪.
বউ আজ চটপটি রাঁধলো। চটপটি জিনিসটা আমার প্রিয় খাবারের লিস্ট পরে না। তবু বউ রেঁধেছে বলে কথা। ভেবেছিলাম এক বাটি খাবো ! খাওয়া শেষ হতে দেখি ২ বাটি সাবরে দিয়েছি। চটপটিতে কি টক একটু বেশী হয়েছে? কি জানি বাপু, হলেও হতে পারে।
বেশ অলস দিন কাটছে। আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন। মনটাও বিষন্ন অজানা কারনে।
৫.
দুদিন ধরে মনোযোগ দিয়ে অস্ট্রেলিয়ান টিভি নিউজ দেখছি না। আবহাওয়ার খবর অবশ্য দেখছি ( শীত কালে তাপমাত্রা কতটুকু নামলো সেটা আমাকে দেখতেই হয়)। অযথা মন খারাপ করার খবর শুনতে কারোই বা ভালো লাগে!
শুনলাম আরো এক অস্ট্রেলিয়ান সৈনিক মারা গেলো আফগানিস্তানে, একটি ছোট্ট সংবাদ। কিন্তু সেই সৈনিকটির পরিবারের জন্য বিশাল ও অপূরনীয় একটি শোকের সংবাদ, অবশ্য এর খবর কেউ রাখে না। নোংরা রাজনীতির স্বার্থে আর কত মানুষযে বলি হবে এভাবে। কবে যে অস্ট্রেলিয়া পরিপুর্ন স্বাধীন দেশের মতো আচরন করতে পারবে সেটা ভাব্বার বিষয়। হায়রে রাজনীতি। মানুষের চাইতে স্বার্থ বড়।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।