শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০০৮

ঘর পোড়া গরু সিদুঁর দেখলেই ভয় পায়

সেক্টর কমান্ডার ফোরামের কনভেনশনের খবরটি পড়ে প্রায় এক যুগ আগের গণআদালতের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। শহীদ জননি জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সেই স্বপ্নময় গণজাগরণ থেকে গণআদালত এবং সেই আন্দোলনের সফলতা কিভাবে রাজনীতির নোংরা স্বার্থের কাছে বলি হলো সেটা ভাবছি। শহীদ জননীর মৃত্যুর পর বেগম মুশতারি শফির রাজনীতি নেতাদের ঘরে ঘরে ঘুরে আন্দোলনের সমর্থন চাওয়ার ভিক্ষে চাবার ঘটনাগুলো যখন তাঁর লেখনিতেই পড়েছি তখনও রাজনীতির কথাই ভেবেছি।

ব্যক্তিগতভাবে স্বাধীনতার পর দালাল আইনের মতো হালকা আইনের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া বা বংগবন্ধুর সাধারন ক্ষমা ঘোষনা বা দেশীয় যুদ্ধাপোরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার শিথিলতা ও উদাসীনতাকে মেনে নিতে কখনই পারি না বলেই হয়তো মাঝে মাঝে মনে হয় সেই বিশাল ভুলের মাশুল আমরা এখন গুনছি। একাত্তরের ঘাতকরা যখন বড় গলা করে তাদের পাপের কথা বলে তখন মনে হতেই পারে এটা সেই ভুলের মাশুল।

বর্তমানে সেক্টর কমান্ডার ফোরাম যখন যুদ্ধাপোরাধীদের বিচার দাবি করে ১৬ দফা ঘোষনা করেন বর্তমান অরাজনৈতিক তথাকথিত তত্বাবধায়ক সরকারের কাছে তখন সেই দাবির ভবিষ‌্যত নিয়ে ভাবছি। যেখানে এ সরকার যুদ্ধাপোরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার মতো জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী জিনিসটি নেবার আগ্রহই প্রকাশ করেনি সেখানে এ দাবির সফলতা আশংকিতই করে আমাকে।

রাজনৈতিক সরকার ( আদৌ যদি আসে ) ক্ষমতায় আসলে এ দাবী কি সফলতা পাবে সেটা নিয়েই বেশী আশংকিত। আমাদের রাজনীতি যে বড়ই স্বার্থপ্রবণ। এ রাজনীতির জন্যই পিতার নেপথ্য খুনির সাথে আন্দোলন বা স্বামির খুনির সাথে হাসিমুখে চা খাবার ঘটনা ঘটে। দেশের চাইতে যেখানে দল বড়, দলের চাইতে যেখানে নিজ স্বার্থ বড় সেখানে কোনোই আশাই আমাকে আশান্বিত করে না।

যুদ্ধাপোরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া মতো বিশাল কাজ রাস্ট্রীয় পর্যায় থেকেই করতে হবে এবং এর জন্য সরকারের পরিপুর্ন সহায়তা ও সমর্থন থাকতে হয়। সেক্টর কমান্ডার ফোরাম হয়তো প্রাথমিক গনজাগরন তৈড়ি করতে পারবে তবে আসল কাজটি করতে হবে সরকারকেই। এ জন্য দরকার সরকারের স্বদিচ্ছা, এবং এ স্বদিচ্ছা নিয়েই সংশয় আমার।

এ প্রজন্মে যুদ্ধাপোরাধীদের বিচার না করতে পারলে হয়তো আর কখনই করা হবে না। মৃত্য পরবর্তী বিচার নামক প্রহসন আমি দেখতে চাই না।

কথায় আছে "ঘর পোড়া গরু সিদুঁর দেখলেই ভয় পায়"। আমিও ভয় পাই।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।