শনিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০০৮

ক্যানবেরায় মালটিকালচারাল ফেস্টিভাল' ২০০৮ এ কিছুক্ষন


অনেক দিন পর বউকে নিয়ে বেরুনো হয় না। সপ্তাহ খানেক আগে একদিনের জন্য ঝটিকা সফরে সিডনী যাওয়া হলেও সেটাকে আদতে পরিপূর্ন ভ্রমন বলা যায় না। ভোর ৪ টায় বাস ধরে চরকির মতো দৌড়ুলে তাকে কি আর ভ্রমন বলা যায় ! সেদিন বাসায় ফেরত আসতে আসতে রাত ১২ টা বেজে গেলো। ভাগ্য ভালো নিজের বারোটা বাজেনি।

আজ থেকে ক্যানবেরায় মালটিকালচারাল ফেস্টিভাল ২০০৮ শুরু হয়েছে । গত রাতেই ভেবে রেখেছিলাম যাবোই যাবো। ২০০৫ এর মালটিকালচারাল ফিয়েস্তায় যাওয়া হয়েছিলো। মাঝে জীবন সংগ্রামের যাঁ‌তায় আর সব বিলাসীতার মতো এটার কথাও ভুলে গিয়েছিলাম। যাই হোক অনেক প্যাঁচাল পারা হলো, এবার কাজের কথায় আসি।

সকালে ছোট্ট একটু কাজ শেষ করে বাসায় এসে দেখি বউ আমার নিদ্রা দেবীর উপাসনায় ব্যস্ত। আমি চুপি চুপি কম্পু চালু করতেই উনার উপাসনা ভংগ হলো। আজো আবিস্কার করতে পারলাম না কি ভাবে উনি ঘুমের মাঝে কম্পুর শব্দ টের পান ( বিঃদ্রঃ আশে পাশে বোমা ফুটলেও উনার ঘুম ভাঙে না )।

ইচ্ছে ছিলো বেশ সময় নিয়ে সব কিছু ঘুরে দেখবো। বাস স্টপেজে এসে বউ আবিস্কার করলেন উনি সাথে টাকা আনেনি। উনার টিকিট আছে কিন্তু আমার তো টিকিট কিনতে হবে !! উপায় ? বাসায় ফেরত এসে টাকা নিয়ে আবার বাস স্টপেজ। মাঝ খানে ১ ঘন্টা উধাও।

এবারের ফেস্টিভাল বিশাল এলাকা জুড়ে করা হয়েছে। প্রথমবার যখন এসেছিলাম তখন এতো বড় দেখিনি। ক্যানবেরা সিটি সেন্টারের গারিমা প্লেস থেকে শুরু করে সিভিক স্কোয়ার। ৩টি উন্মুক্ত স্টেজ। অসংখ্য খাবারের দোকান। সারা পৃথিবী থেকে আসা অভিবাসীরা তাদের খাবারের পসারা সাজিয়ে বসেছেন। কি নেই সেখানে ? সুস্বাদু সব খাবার , অসাধারন সব শরাবে তাহুরা এবং নানান সাজে সব হুরপরি।

সবার প্রথমেই দেখা প্যাসিফিক আইল্যান্ডারদের সুরেলা গানের সাথে নাচ কেমন যেনো নস্টাকজিক করে দেয়। সুরটা অনেকটুকুই বাংলা গানের মতোই। এর পর একে একে চিলিয়ান ব্যালে, ভারতের ব্যন্ডিট লাইক বলিউড গ্রপের ডিস্কো ড্যান্স , একটি অস্ট্রেলিয়ান ড‌্যান্স গ্রুপের বেলী ড‌্যান্স । একটি দেশ কিভাবে তাদের দেশে আসা অভিবাসীদের সংস্কৃতি নিজেরদের মাঝে গ্রহন করে নেয় তার একটি উদাহরন ছিলো সেই বেলী ড্যান্স। আরব থেকে ডাউন আন্ডার।

ইউরোপের দেশগুলো আসা অভিবাসীরা তাদের রঙ-চঙের পোষাকের সাথে সাথে তাদের রঙিন সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে এদেশে এসেও তার প্রমাণ পেলাম প্রতি পদক্ষেপে। প্রতিটি দেশই তাদের খাবারের স্টলে দেশীয় ঐতিহ্যবাহী খাবারের সাথে সাথে নিজ দেশের পাণীয় যেমন পরিবেশন করছে ঠিক সে ভাবেই নিজেদের সংস্কৃতি-ভাষা-ঐতিহ্যকে পরবর্তি প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেবার চেষ্টা করছে। স্টলগুলোর সামনে সেই সব দেশের মানুষদের ভির, হাতে বিয়ার নিয়ে নিজের ভাষায় কলকাকলি সেটার প্রমাণ।

ক্যানবেরার বাংলাদেশীরা এবার দুটো স্টল দিয়েছে দেখলাম। ঢাকাইয়া বাংলাদেশী এবং বাংলাদেশ- অস্ট্রেলিয়ান এসোসিয়েশন ক্যানবেরা। অন্যসব স্টলে বিশাল করে নিজ নিজ দেশের নাম লেখা থাকলেও বাংলাদেশীদের স্টলে সেসব যথারীতি অনুপস্থিত। ছিলোনা দেশের কোনো ছবি। সাধামাটা কিছু খাবার সাজিয়ে উনারা বসে আছেন। ছোট্ট দুটো স্টলে বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো তথ্য জানার দরকার হলে সে আশা সুদুর পরাহত। এখানেও গ্রুপিং এবং যথারীতি নোংরা গ্রুপিং। বাংলাদেশ স্টল থেকে কোনো কিছু খাবার আগ্রহ জন্মায়নি।

২০০৫ এ যখন প্রথম এই ফ্যাস্টিভাল এ যাই তখন সাথে ছিলো আমার হাউস মেইট "ডেভিড দ্যা গ্রান্ড চাইল্ড অফ ক্যাপ্টেন পাইরেট" ,একজন ডাচ-শ্রীলংকান-ব্রিটিশ-অস্ট্রেলিয়ান। ফ্যাস্টিভালে গিয়েই আমরা দুজনে ঝাঁপিয়ে পরেছিলাম পেট পুজোয়। নানান দেশের অজানা সব সুস্বাদু খাবার। সে কি ভোলা যায় !! পর্ক ছাড়া আর কি খাইনি !!!এবার তেমন একটি করা হয়ে উঠেনি। টার্কিশ- ইরানী- শ্রীলংকান খাবার দিয়েই সন্তুস্ট থাকতে হলো। তবে কাল আবার যাচ্ছি। তখন অন্যগুলোর পালা ইনশাল্লাহ।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভুক্ত দেশ ও আরব দেশগুলো তাদের দেশের বিভিন্ন তথ্য সহ স্টল দিয়েছে। সেখানে প্রচুর ভীর দেখতে পেয়েছি। ভাবছি বাংলাদেশের এরক একটি স্টল দিলে কি ভালোই বা হতো। বাংলাদেশ হাইকমিশনের নিদ্রা যে কবে ভাঙবে, কবে যে এদের সুবুদ্ধির উদয় হবে।

দারুন এক সময় কেটেছে। অনেক ইচ্ছে ছিলো বেলী ড্যান্সারদের সাথে ২/১ টা ছবি তুলবো। বউয়ের আপত্তিতে সেটাও সম্ভব হলো না, অথচ অনেকেই ছবি তুলছে।
কাল আবার দেখা হবে।

আল বিদা

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।