বৃহস্পতিবার, ২৪ মে, ২০০৭

ক্ষমা চাই শংকর স্যার, ক্ষমা চাই।

গ্রামের এক স্কুলে পড়ি তখন।ক্লাস ৭ ও ৮ এ স্যারের কাছে অংক শিখতাম। ছোট খাট গরনের শান্ত একজন মানুষ। কিছু কিছু মানুষের কখনো ভোলা যায় না, স্যার তেমনি একজন মানুষ।

স্যার বাসায় আসতেন পড়াতে। প্রথম যেদিন আসেন পড়াতে আম্মু উনার জন্য নাস্তা-চা দিয়েছিলেন। আমি বোকার মতো প্রশ্ন করেছিলাম, "স্যার, মুসলমানের বাসায় খেলে ধর্ম নষ্ট হবে না ?" স্যার হাসতে হাসতে বলেছিলেন "খাবারের আবার ধর্ম কিসের? ধর্ম কি এতোই ঠুনকো যে মুসলমানের খাবার খেলেই ধর্মচূ্ত্য হয়ে যাবো ?"

খুব ধার্মিক মানুষ ছিলেন স্যার। কৈশরের সে সময়টাতে মনুষ্যত্ব ও ধর্ম সম্পর্কে চোখ খুলতে শুরু করেছে মাত্র। স্যারের সেই দুটো কথা চোখের দুয়ার আরো খুলে দিয়েছিলো।

স্যারের এক ভাতিজার বিয়েতে গিয়েছিলাম। মুসলমান বলে তাদের ঘরে খেতে দেয়া হয়নি। স্যার নিজের হাতে তাঁর ঘরে নিয়ে খাইয়েছিলেন আমাকে। আর বলেছিলেন " বাবা, সবাই মানুষ নয়, মনুষত্বের চাইতে ধর্ম বড় অনেকের কাছেই। এটাই সব অধর্মের মূল।"

স্যারের এক ছেলে আমার এক ক্লাসে পড়তো, নাম ছিলো হারাধন। অনেক দিন পর শুনেছি হারাধন কুচবিহারে তার পিসির বাড়ী চলে গিয়েছে। খুব কষ্ট লেগেছিলো সেটা শুনে। স্যারের এক মেয়েও ছিলো। সেও মনে হয় চলে গিয়েছিলো ভারতে একসময়। স্যারকে একবার বলেছিলাম স্যার আপনিও কি যাবেন ভারতে । স্যার শুধু একবার বলেছিলেন " দেশ মাতা ছেড়ে পরবাসী হোবো ?" আর প্রশ্ন করতে সাহস হয়নি।

আজ ভাবি, কেনো এই সব মানুষ হাজার বছরের মাতৃভূমি ছেড়ে পরবাসী হয়। সুখতো সেখানেও নেই। এ প্রশ্নের উততর আমার জানা।অসহায় অনুভব। কিছুই করতে পারি না।

প্রতিবছর কতো যে হাজার বংগ সন্তান যে একটু নিরাপততার আশায় সীমান্ত পারি দিচ্ছে সে খবর কেই বা রাখে।
১৯৯১ এ ভোলা বা ২০০১ এ পূর্নীমার করূন কাহিনী শুনে কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না আমার।

ভোট ব্যাংক হিসেবে দাবী করি কিন্তু বিপদে পাশে এসে দাঁড়াই না।
ধর্ষনে গর্ভবতী হয়ে পড়লে মজা করে বলি " বাহ ! বেশ ফার্টাইল, এ রকম হলেতো দেশের জনসংখা দিগূন হয়ে যেতো "
দেশ ছেড়ে যাবার আগে পানির দামে ভিটে মাটি কিনে রাখি, পারলে জোর করেই। সেই ভিটে মাটির তুলসি গাছে উপড়ে ফেলে গড়ে তুলি বাগান বাড়ী।
রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করার নামে দুর্গা পুজোয় বাধা দেই, ভুলে যাই ইসলামের সেই বানীর কথা, ' যার যার ধর্ম তার তার কাছে'। ইসলামের নামে কতল করি আরেক জন আদম সন্তান।
গনতান্ত্রিক দেশ বলে দাবী করলেও সরকারী চাকরিতে দাবিয়ে রাখি। তৈরি করি বৈষম্য পদে পদে।

স্যার,
অনেক দিন আপনার সাথে দেখা হয় না। জানি না এ জীবনে দেখা হবে কি না। এটাও জানি না আপনি বেঁচে আছেন কি না। এটাও জানি না আপনি দেশমাতা ছেড়ে পরবাসী হতে বাধ্য হয়েছেন কি না। তবে আপনার এই ছাত্র আজ পড়াশুনা শিখেছে কিন্তু পরিপূর্ন মানুষ হয়নি। ব্লগের পাতায় বড় বড় কথা বল্লেও সাহস হয়নি তার এসবের প্রতিবাদ করার, প্রতিকার করার।
ক্ষমা করবেন আমাকে।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।