বৃহস্পতিবার, ১৭ মে, ২০০৭

সামজিক শ্রেনীকরন, পড়াশুনা ও বিতর্ক

আমাদের সামজিক ব্যবস্থার কারনেই নানা রকম শ্রেনীভেদ দেখা যায়। কিছুটা লেখা পড়া শিখলেই নিজের মাঝে ফালতু অহমিকা জেগে উঠে।

প্যান্ট-শার্ট পড়ে রিকশায় বসে পিতৃতুল্য বয়সের রিকসা চালককে তুই তুকারি করতেও বিবেকে বাঁধে না আমাদের।

সরকারী চাকরি করতে গিয়ে প্রথম দ্বিতীয়-তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেনী ভেদাভেদটা ভুলতে পারি না।

বিসিএস দিয়ে প্রথম শ্রেনীর চাকুরি পেয়ে ধরাকে সরা মনে করতে শুরু করি, বাকি সবাইকে নিজের অধস্থন মনে করতে শুরু করি। স্যার সম্ভাষন না শুনলে দাঁত মুখ খেঁচিয়ে উঠি।

সামরিক বাহিনীতে কাজ করতে গিয়ে জনগনকে ব্লাডি সিভিলিয়ান বলে গালি দিতে শুরু করি, ভুলেই যাই যে আমার পিতাই একজন 'ব্লাডি সিভিলিয়ান'। নিজেকে দেশের রক্ষাকর্তা মনে করে সবাইকে দেশের শত্রু বলে ভাবতে শুরু করি। নিজেকে দূর্নীতি মুক্ত দাবী করে অন্য সকলে দূর্নীতিবাজ ঢাকতে শুরু করি। নিজেদের সবচাইতে সত ও সভ্য বলতে থাকি।

গ্রামের সাধারন কৃষক পরিবার থেকে উঠে এসে শহরে এসেই লেখা পড়া শিখেই নিজেকে সাহেব ভাবতে শুরু করি, পিতার কৃষক পরিচয় ঢাকার জন্য পিতাকে আড়াল করতে শুরু করি। ভুলে যেতে চাই নিজের অতীতকে। তথাকতিত এলিট ক্লাসের সাথে নিজেকে মেলাবার জন্য শুরু করি নোংরা অভিনয়।

শুরু টা আসলে শুরু হয় শৈশব থেকেই। বাবা-মা বলেন " তুমি এর সাথে মিশতে পারবে না, ওমুকের সাথে কথা বলতে পারবে না ; কারন সে একজন কৃষকের ছেলে, কারন সে একজন কেরানীর ছেলে, রিকসা চালকের ছেলে "। অফিসারের ছেলে-মেয়ে মিশতে পারে না কর্মচারির ছেলে-মেয়েদের। এভাবে মনের মাঝে গেঁথে যায় এক ধরনের শ্রেনীকরন।

ছোটবেলায় পড়াশুনা শুরু করবার সময় চলে আসে আরেক শ্রেনীকরন। জেলার স্কুলে পড়া ছেলেমেয়েদের মাঝে ঢুঁকে যায় অন্য একরকম অহমিকা। অন্যান্য স্কুলের ছেলে-মেয়েদের হেলার চোখে দেখা হয়।

এটা চলতে থাকে কলেজ-বিশ্বদ্যালয়ের পর্যন্ত।
বুয়েটে পড়লে অন্যান্য দের হেয় করতে থাকে। বুয়েটের ইন্জিনিয়াররা হেলে ফেলা করতে থাকে বিআইটি থেকে পাস করা ইনজিনিয়ারদের। সরকারী মেডিক্যাল থেকে পাস করে ডাক্তাররা বেসরকারী মেডিক্যাল থেকে পাস করে দের সফদর ডাগদর বলে ঢাকতে শুরু করে।
সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েদের কম মেধার মনে করা হয়। কলু বলে ঢাকতে থাকে কলেজ থেকে মাস্টার্স করা ছাত্রদের।
এভাবেই নানা ধরনের ব্রান্ডিং চলতেই থাকে।
চলতে থাকে অহেতুক শ্রেনীকরন ও ফালতু বিতর্ক।
-------------------
ব্লগে আজকের বিতর্ক থেকেই এলেবেলা লেখা।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।