মঙ্গলবার, ১ মে, ২০০৭

বোরো ধানে চিটা ও গ্রামীন অর্থনীতি

অন্যান্য ফসল থেকে অর্থ আশা করা হলেও গ্রামে বোরো ধানটাকে সারা বছরের খোরাক হিসেবে রাখা হয়। সামরিক শান্তিতে খবরের কাগজে অনেক খবরের মাঝে এই বোরো ধানে চিটার (ধানের শীষে ধানের অস্তীত্বহীনতা) খবরটাও কিছুটা ম্লান।
আসলে গ্রামের খবর আজকাল খবরের কাগজের ভেতরের পাতায় শোভাবর্ধন করা ছাড়া আর কিছু করতে পারে না। সুশিল নাগরিক সমাজে গ্রামের স্থান অনেকটাই আনস্মার্ট হিসেবেই গন্য।
ধানে চিটা হবার কারনে গ্রামীন অর্থনীতিতে কি প্রভাব পড়বে সেটা কিছু দিন পরই বোঝা যাবে। ৮০% লোকের খাদ্যের সংস্থান না করেই দেশের অর্থনীতিতে কি ভাবে গতিশীলতা আনয়ন করা যাবে সেটা বোঝার মতো ক্ষমতা আমাদের বর্তমান শাসকদের থাকলেও সেটা ভাবার সময় তাদের আছে কি না সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।
বোরো ধান রোপনের সময় চাষীদের সারের জন্য হন্যে হয়ে ছোটার খবর খবরের কাগজে আমরা পড়েছি। ধানের চারা লাগানোর একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবশ্যই সার দিতে হয় আর সেই সময়ে সার দিতে না পারলে ধানের ফলন তো আশা করাই যায় না বরন্চ ধানের আশা ছেড়েই দিতে হয়।
এর সাথে ছিলো তেলের দাম। গ্রামে সেচের জন্য মূলত ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্রের উপর নির্ভর করে। ডিজেলের সংকট ও সাথে দামের ক্রমাগত বৃদ্ধি সংকটকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছিলো। খবরের কাগজে ডিজেল সংকট সাথে সার সংকট, কৃষকের কি সর্বনাশ করেছিলো সেটা শুধুমাত্র কৃষকই উপলব্ধি করতে পারবেন। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ধানে চিটা।
১ বিঘা জমিতে আশা করা হয় ২০ -২৫ মন ধান । চিটা হবার কারনে সেই জমি থেকে পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ১০-১২ মন ধান। এতে বিঘা প্রতি লোকসান হচ্ছে ৩-৪ হাজার টাকা। যেখানে খোরাকী উঠছে না সেখানে যুক্ত হয়েছে আর্থিক লোকসান। কৃষক যাবেই বা কোথায়?
হাইব্রিড নামক উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের ধানের বীজেই মূলত এ সমস্যা বেশী দেখা দিয়েছে। যুগ যুগ ধরে গোলায় বীজ ধান সংরক্ষনের ধারা থেকে সরে এসে কৃষক এখন নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে হাইব্রিড নামক উচ্চফলনশীল বীজ ধানের উপর।
এর জন্য সরকারের বি.এ.ডি.সি এবং অন্যান্য বীজ বাজারজাত করন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরাসুরি দায়ী। তবে দায় স্বীকার করতে তাদের দেখা যাচ্ছে না ও অতীতেও দেখা যায় নি।
খবরের কাগজে হয়তো কিছুটা আমরা পড়েছি তবে জরূরী অবস্থায় সামরিক তত্বাবধানে চালিত প্রশাসনে সব কিছু স্বাভাবিক দেখানোর নোংরা ও চিরায়ত পন্থায় অনেক খবর আমরা পাই নাই এবং পত্রিকাগুলো অনেকটা ইচ্ছাকৃত ভাবেই খবর গুলোকে প্রায়শই এড়িয়ে গিয়েছে।
এই সংকটের উপায় আমাদের বের করতেই হবে। আমরা যা কিছুই বলি না কেনো দেশের অর্থনীতি এখনো বহুল ভাবে গ্রামের উপর নির্ভরশীল। গ্রাম বাঁচলে দেশ বাঁচবে।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।