বুধবার, ১৮ এপ্রিল, ২০০৭

মফিজের ভারত ভ্রমন - 4 ( আগ্রা ও ফতেপুর সিক্রি )


কোন এক উচ্ছল সকালে আগ্রার উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলাম আমরা।

গন্তব্য : আগ্রা বাসাড্ডি ( হিন্দিতে বাস স্ট্যান্ড ) ,
বাহনঃ কদাকার রিকসা। বাসাড্ডিতে এসেই লেগে গেলো ভয়াবহ খুদা। তাকিয়ে দেখি পুরির মতো বিশাল কি যেনো ভাজছে! গরম গরম খেয়ে নিলাম বেশ কটা। বলে রাখা ভালো আমি আবার খেতে বেশ পছন্দ করি।
দৌড়ে বাসে উঠে গেলাম দু বন্ধু, অনেক দূর যাবার পর বুঝতে পারলাম ভূল বাসে উঠে পরেছি ! আগ্রা শুনতে আমরা উঠে পরেছি হাতরাস এর বাসে। কি আর করা, আগ্রার বাসে র জন্য আপক্ষা কাঠ ফাটা রোদে দাঁড়িয়ে।
আগ্রা বিজলী বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে ঠিক করলাম ফতেপুর যাবো। সম্রাট আকবরের রাজধানী মিস করা যাবেই না ! লোকাল এক লককর ঝককর বাসে চড়ে চল্লাম ফতেপুর সিক্রি । বাসে বেশ মজা হয়েছিল, সুন্দর এক মেয়ের সাথে টাংকি মারতে মারতে কখন যে পৌছে গেলাম ফতেপুর সিক্রি টেরই পেলাম না।
একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিলাম , বাসের কন্ডাক্টর সামনে বসে থাকেন আর সবাই টিকিট কাটে তার কাছে গিয়ে, কাউকে ফাঁকি দিতে দেখিনি। ফতেপুর পৌছিতে পৌছুতে প্রায় সন্ধ্যা। সরাসুরি একটা মোটেলে উঠে পড়লাম দুজন, পুরো মোটেল গেস্ট বলতে আমরা দুজন।
সেখান থেকে আমরা ফতেপুর ফোর্ট দেখতে গেলাম।বিশাল দূর্গ ! সেলিম শাহ্ চিশতির মাজার, রানী যোধাবাঈের মহল, তানসেনের গানের জলসা, খাস মহল, আম মহল , মনে হচ্ছিল আমরা যেনো সেই মুঘল আমলে চলে গিয়েছি, কেমন যেনো নস্টালজিকতা।

ফতেপুর ও সিক্রি দুটো ভিন্ন শহর, সিক্রিতে অবশ্য যেতে পারিনি সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায়।
একটা রেস্টুরেন্টে কিছু খেয়েই দু বোতল হুইস্কি , সোডা ও বরফ নিয়ে সোজা মোটেল, গিয়েই সেই যে শুরু হোলো পান ! মাতাল কাকে বলে।

সকালে মজার উটের দুধের দই খেয়েছিলাম, কেমন যেনো গন্ধ, তবে মন্দ না।
সেখান থেকে জীপে করে সোজা আগ্রা।আগ্রায় একটা বেবি রিজার্ভ করলাম সারা দিনের জন্য, 200 রুপি।
প্রথমে গেলাম আগ্রা ফোর্টে, বিশাল এক দূর্গ, সাথে গাইড থাকাতে দেখতে সুবিধা হয়েছিল। গাইড যখন সম্রাট শাহজাহান যে ঘরে বন্দি ছিলেনএবং যে খান থেকে তাজমহল দেখতে পেতেন সেই ঘরে নিয়ে গিয়েছিল তখন কেমন জানি মন টা আমারও খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
আগ্রা ফোর্ট থেকে গেলাম " তাজ মহল " । যা দেখার জন্যই আগ্রায় আসা। বেবিওয়ালার বদ পরামর্শে 10 মিনিটের জন্য ভারতীয় হয়ে গেলাম আমরা। ভারতীয়দের জন্য 5/7 রুপি টিকিট আর ফরেনারদের জন্য ডলার, মনে নেই কত, তবে অনেকে হবে হয়ত।

তাজের সদর দরজা দিয়ে যখন ঢুকলাম তখন অন্য রকম এক অনুভূতি, কি রকম যে সেটা বলে বোঝাতে পারছি না। ছবিতে দেখা আর চর্মচোখে দেখা! দুটো দু রকম। তাজমহল পুরোটা ঘুরে ঘুরে দেখলাম, অসাধারন, সত্যিই অসাধারন । তাজমহলে উঠার সময় জুতা পরে উঠে যায় না, জুতার উপরে কাপড়ের মোজার মতো একটা পড়তে হয়। 10 রুপি ভাড়া, এখানেও ব্যবসা।
তাজ দেখে কিছু কে না কাটা করলাম আমরা , আমরা মানে আমার বন্ধু। আমার পকেটের অবস্থ ভালো ছিল না তেমন একটা।
আরো অনেক জায়গায় যেতে ইচ্ছে করেছিল কিন্তু সময়ের অভাবে যেতে পারিনি, সেই বেটার নেক্সট টাইমের মুলা!

আগ্রা ক্যান্ট থেকে দিল্লির ট্রেনের টিকিট কাটলাম। কাটলাল লোকাল ট্রেনের টিকিট মাগার উঠে পরলাম এক্সপ্রেস ট্রেনে।
আসলো টিটি, দিলাম বকশিস! সব ফকফকা।
এবার গন্তব্য দিল্লি, 2 ঘন্টার জার্নি।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।