মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০০৭

মফিজের ভারত ভ্রমন - ১ ( রাজ শাহি টু মালদা )

১৯৯৬ , এইচ.এস.সি পাস করে মহা উত্‍সাহে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছি।তখন ভারতে পড়াশোনা করবার একরকম হিরিক ছিল।
ইন্ডিয়ান হাইকমিশনের মাধ্যমে আমিওএকটা স্কলারশিপের এপ্লাই করে ফেল্লাম। যা আছে ভাগ্যে এ রকম একটা ভাব। আই.আই.টি তে ভর্তিহবার মার্কস আসে নাই, তাই অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ই ছিল সম্বল। অনেক দিন কেটে গেলো খবর আসে না, ভাবলাম আর হবে না। একদিন হঠাত্‍ চিঠি আসলো, আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সুযোগ হয়েছে।

সময় নাই হাতে একদম তখন একদম।রাজশাহিতে ছিলাম তখন আমি বাবার কাছে।তড়িঘড়ি করে রাজশাহি ইন্ডিয়ান ডিপুটি হাইকমিশন থেকে ভিসা নিলাম।

মিশন ঃ আলিগড়।
পথ ঃ অজানা।
সংগি ঃ কেউ না।

খুব সকালে সোনা মসজিদের দিকে যাত্রা, সাথে বাবার বডিগার্ড।পথে মনে হোলো সিগারেট কেন হয় নি। কানসাটে গাড়ি থামাতে বল্লাম চা খাবার জন্য। চা খাবার ফাঁকে ৪ প্যাকেট বাংলা ৫৫৫ কিনে ফেল্লাম।
সোনা মসজিদ চেক পোষ্টে কোনো রকম সমস্যা হয়নি।চা খেতে খেতে সব কিছু শেষ করে ভারতের উদ্দেশ্য হাঁটা দিলাম।
ঢোকা মাত্র বি.এস.এফ ।পাসপোর্ট দেখানোর পর গেলাম কাস্টমস এ।সাথে তেমন কিছুনা, তবুও হয়রানি করে চেক করলো সব, কথা বলার ফাঁকে জানতে পারলাম কাস্টমস অফিসারের বাড়ি ছিল আমাদের ওদিকে, সাথে সাথে চা চলে এলো।নাড়ির টান কি জিনিস সেটা টের পেলাম আরেকবার সে দিন।
ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে শুনতে পেলাম বাস ধর্মঘট ! ম হা সমস্যা, সরকারি বাস ছাড়া আর কিছু নাকি চলবে না। ২ ঘন্টা অপেক্ষা করার পর একটা টাটা বাস আসলো , দেখে মনে হলো ২য় মহাযুদ্ধের আমলের।বাসে চড়ে বসলাম। টিকিট ৫ রুপি, গন্তব্য মালদা টাউন।
বাসে উঠেই সিগারেট ধরালাম, দেখি ২ জন আবার বলে ঊঠলো " দাদা কি হচ্ছে ? "
আমি নিরাসক্ত মুখে বল্লাম "সিগারেট খাই"
এবার তারা বলে " ওপারের ছেলে ছোকরারা আদব লেহাজ একদমি শেখে নি "
আমি বলি " ঠিকই কইসেন" বলে এক গাল ধোঁয়া ছাড়লাম।আসলেই বেয়াদব।

রাস্তায় আরেক সমস্যা , কিছুদূর যাবার পর পর বাস বন্ধ হয়ে যায়। সবাই মিলে ঠেলি, চালু হয়।এভাবে ঠেলা ধাককার পর মালদা পোঁছুলাম ১ ঘন্টা পর। মালদা গিয়েই শুনি স্টেট বাস ছাড়া সব বন্ধ, টিকিট পাওয়া অসম্ভব। এদিকে পেটে চামচিকা বুকডন দিচ্ছে, শুনেছিলাম হিন্দু হোটেলে খাবার নাকি অসাধারন হয়।গেলাম এক রেস্টুরেন্টে খেতে।'মহা মায়া হিন্দু হোটেল', মেনুঃ মুড়ো ঘন্টো ও ভাত।ওপার বাংলায় আবার আমাদের মতো নিয়ম না, যত বারি ভাত নিচ্ছি ততবারি দেখি ওয়েটার জোরে জোরে বলছে এক হাতা ভাত ! আর ম্যানেজার সাথে সাথে খাতায় লিখে নিচ্ছে। আজিব ব্যাপার সব।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে সোজা মালদা ট্রেন ষ্টেশনে, উদ্দেশ্য আলিগড়ের টিকিট কাটা। লাইনে দাড়িয়া আছি তো আছিই, লাইন আর আগায় না। সামনে দেখি একটা ছেলে দাঁড়িয়ে ।হেবি মানজা মারা।হাতে দেখি ইকোনো বলপেন।বুঝলাম বাংলা আদমি।পরিচিত হলাম। সেও আলিগড় যাচ্ছে।লারে লাপ্পা।পুরো ভ্রমনে সে ছিল আমার সাথী।অনেক কষ্ট করে মালদা - আলিগড় এর টিকিট পেলাম।
খরচ হলো ৩৩০ রুপি (প্রায়) ফারাককা এক্সপেস, স্লিপিং ক্লাস ,দুরত্ব ১৩৫৬ কিলোমিটার, ২ দিন ৩ রাতের বিশাল জার্নি,
সন্ধা ৬ টায় ট্রেন ।
-------------
মফিজ নামকরনের মাজেজা ঃ দেশের যে অংশ থেকে এসেছি সেখানকার মানুষদের অন্যরা মজা করে মফিজ বলে, তাই আমিও মফিজ।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো, সে যত তিক্তই হোক না কেনো।
পোস্টে মন্তব্যের দায়-দায়িত্ব একান্তই মন্তব্যকারীর। মন্তব্য মডারেশন আমি করি না, তবে অগ্রহনযোগ্য ( আমার বিবেচনায় ) কোনো মন্তব্য আসলে তা মুছে দেয়া হবে সহাস্য চিত্তে।